হার্টবিটডেস্ক
বিশ্বে প্রথমবারের মতো মানবদেহে শূকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গত শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্যক্তির শরীরে সফল ভাবে এই হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা বিবিসি ও আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে ৫৭ বছর বয়সী ডেভিড বেনেটের শরীরে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়। পরীক্ষামূলক এই সার্জারিতে চিকিৎসকরা সময় নিয়েছিলেন ৭ ঘণ্টা। অপারেশনের তিনদিন পর ডেভিড বেনেট বেশ ভালো আছেন বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে মানবদেহে সফলভাবে শূকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করার ‘ঐতিহাসিক’ এই প্রক্রিয়ার ফলে বিশ্বজুড়ে অঙ্গদানের ক্ষেত্রে যে সমস্যার মুখে পড়তে হয়, তা থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার বাল্টিমোরের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিকেল স্কুল এক বিবৃতিতে জানায়, গত শুক্রবার ৫৭ বছর বয়সী ডেভিড বেনেটের দেহে শূকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যা জিনগত দিক থেকে পরিবর্তন করা হয়েছিল। আপাতত ওই রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন এবং তার অঙ্গ কীভাবে কাজ করে, সেদিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।
চিকিৎসকদের দাবি, প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে মাইলফলক হতে চলেছে এই ঘটনা। অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক বার্টলে গ্রিফিথ বলেন, ‘এটি একটি যুগান্তকারী অস্ত্রোপচার ছিল। অঙ্গের অভাব যে রয়েছে, সেই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আমাদের আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে এই ঘটনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে আমরা আশাবাদী যে বিশ্বে এই ধরনের প্রথম অস্ত্রোপচারের ফলে ভবিষ্যতে রোগীদের সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।’
প্রশ্ন উঠতে পারে যে, মানুষের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন না করে কেন শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হলো? ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিকেল স্কুলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডেভিড বেনেট গত কয়েক মাস ধরে খুবই অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন। একটি যন্ত্রের মাধ্যমে তার হৃদপিণ্ড সচল রাখা হয়েছিল।
বেনেটের শরীরের যা অবস্থা ছিল, তাতে মানবদেহের হৃদপিণ্ডের ধকল সহ্য করার মতো শারীরিক সক্ষমতা তার ছিল না। সাধারণ অঙ্গগ্রহীতার শারীরিক অবস্থা যদি অত্যন্ত খারাপ হয়, তাহলে এরকম পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়।
এদিকে ডেভিড বলছেন, ‘অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আগে বিষয়টা এরকম ছিল যে, হয় তাকে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে হবে অথবা এই পন্থায় অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে হবে। আমি বাঁচতে চাই। আমি জানি, এটা অন্ধকারে তীর নিক্ষেপের মতো বিষয় ছিল। কিন্তু (এই অঙ্গ প্রতিস্থাপনই) ছিল আমার শেষ বিকল্প।’
অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর এখন সুস্থ হয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে তিনি উন্মুখ হয়ে আছের বলেও জানান ডেভিড বেনেট।
Discussion about this post