হার্টবিটডেস্ক
করোনার নতুন উপসর্গের দেখা মিলেছে বলে শঙ্কা চিকিৎসকদের। ‘থ্রম্বোসাইটপেনিয়া’ অথবা প্লাটিলেট ঘাটতির কারণে চিকিৎসকরা ধারণা করছেন নতুন উপসর্গের। যদিও আগের দুটি সংক্রমণের সময় বেশিরভাগ রোগীকে কার্যত হাসপাতাল পর্যন্ত টেনে এনেছিল এই প্লাটিলেট ঘাটতি। বয়স্ক বা কো-মর্বিডিটি রোগীকে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। আবার হাই ফ্লো ন্যাজল ক্যানুলা বা ভেন্টিলেশনেও থাকতে হয়েছিল রোগীকে।
এবার এখন পর্যন্ত সেই সমস্যা তেমন প্রকট হয়নি। কিন্তু নতুন এক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ রোগীর রক্তে প্লাটিলেট দ্রুত কমতে থাকছে। ফলে রোগী দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ছেন।
এখনও পর্যন্ত যত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের রক্ত পরীক্ষার সময় এই বিষয়টি নজরে এসেছে চিকিৎসকদের। এতদিন ভাবা হয়েছে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া রোগীর রক্তে প্লাটিলেট কমতে থাকে। যার পেছনে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। কিন্তু সার্স কোভ-২ বা যেসব কোভিড রোগীর বয়স বেশি বা বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ রয়েছে তাদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তবে অবস্থা এমনটা নয় যে রোগীকে প্লাটিলেট দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মূলত তিনটি কারণের জন্য কোভিড রোগীর প্লাটিলেট কমতে পারে। প্রথমত, শরীরে ভাইরাসের আক্রমণ হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বোনম্যারো থেকে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন কমতে থাকে। স্বাভাবিক নিয়মেই লোহিত রক্ত কণিকার মধ্যে থাকা প্লেটলেট উৎপাদন কমে যায়। আর রোগী ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। যেকোনও সংক্রমণের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে। তবে গত দুটি করোনা ঝড়ে ফুসফুসের মধ্যে প্রদাহ বেশি লক্ষ্য করেছেন চিকিৎসকরা।
ভারতেও এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি এক শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার প্লাটিলেট একলাফে ৮০ হাজারে নেমে আসে। কিন্তু ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুর পরীক্ষার ফল নেগেটিভ। শুধু তাই নয়, ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ বা এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের মধ্যে প্লাটিলেট কমার সমস্যা লক্ষ্য করছেন সে দেশের চিকিৎসকরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত, আক্রান্তের শরীরে করোনাভাইরাস অনুপ্রবেশের পর কি ধরনের এবং কত প্রকারের সমস্যা তৈরি করতে পারে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজির প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা শান্তনু ত্রিপাঠির কথায়, ‘শুধু ডেঙ্গু নয়। কোভিড রোগীদের মধ্যে যাদের বিভিন্ন উপসর্গ আছে তাদের থ্রম্বোসাইটপেনিয়া বা প্লেটলেট কমতে দেখা যাচ্ছে। রোগীর শরীরের মধ্যে যেমন থ্রম্বোসিস বা রক্তজমাট বাঁধার মতো সমস্যা দেখা যায়, তেমনই রক্ত পাতলাও হতে পারে। সবটাই নির্ভর করে রোগী কি ধরনের কো মর্বিডিটি রয়েছে তার ওপর।’
চিকিৎসকদের অভিমত, এমন সমস্যা হলে রক্তের রুটিন পরীক্ষা টানা চার থেকে পাঁচবার করে দেখতে হবে। ডেঙ্গুর মতো যদি প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নামে তবে প্লাটিলেট দিতে হবে। তবে এখনো সেই সমস্যা দেখা দেয়নি।
Discussion about this post