হার্টবিটডেস্ক
দেশে জাতীয়ভাবে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে কৌশল, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। ক্যান্সার শনাক্তে জাতীয় কোনো ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
শনিবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘জরায়ুমুখের ক্যান্সার নির্মূলে বৈশ্বিক কৌশল : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তারা এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য পেশ করেন মার্চ ফর মাদার (জননীর জন্য পদযাত্রা) কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়ক ও ক্যান্সার রোগতত্ত্ববিদ ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন।
তিনি জানান, ২০০৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উদ্যোগে ভায়া পরীক্ষাভিত্তিক জরায়ুমুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের কর্মসূচি চালু হয়। পরবর্তীতে সরকার এই উদ্যোগে অর্থায়ন করে। স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের জন্য ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন অর্থাৎ চিকিৎসক দিয়ে স্তন পরীক্ষা পরে এর সাথে যুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৪০০ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ভায়া সেন্টার চালু হয়েছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ১৫ বছরে এই কর্মসূচি লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশের কম সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।
‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার স্ক্রিনিং এমনকি উন্নয়নশীল দেশেও বাস্তবায়ন সম্ভব’, যোগ করেন ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার।
সফলতায় নিম্নহারের প্রধান কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অন্যতম কারণ হলো জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় জাতীয় ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি হিসেবে প্রণীত ও পরিচালিত না হওয়া। এছাড়াও জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সম্পৃক্ত না হওয়া।
‘আরও কতিপয় কারণ হলো- প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধানসহ স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ধাপে বিকেন্দ্রীকরণ না করা, চিকিৎসাকেন্দ্রভিত্তিক অসংগঠিত স্ক্রিনিং থেকে দীর্ঘ ১৫ বছরে সমাজভিত্তিক সংগঠিত স্ক্রিনিং-এ উন্নীত করার জন্য পাইলট কার্যক্রম শুরু করতে না পারা। এছাড়াও স্ক্রিনিং কেন প্রয়োজন, এটি যে ইনভেসিভ অর্থাৎ কাটাছেঁড়া বা কষ্টদায়ক কোনো পরীক্ষা নয়, এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার যথেষ্ট উদ্যোগ না থাকাও অন্যতম কারণ।’
বিশিষ্ট এই ক্যান্সার রোগতত্ত্ববিদ আরও বলেন, সফলতা না পাওয়ার আরও কিছু কারণ রয়েছে। তা হলো- পেশাজীবী, স্বেচ্ছাসেবী জাতীয় ও স্থানীয় সংগঠনগুলোকে এই কাজে সম্পৃক্ত না করা, সর্বোপরি, স্ক্রিনিং যে কোনো ক্লিনিক্যাল প্রোগ্রাম নয়, এটি একটি জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি, কর্মসূচি প্রণয়ন ও পরিচালনার কোনো পর্যায়েই বিষয়টি প্রতিফলিত না হওয়া।
বক্তারা বলেন, জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য এবং প্রথমাবস্থায় নির্ণয় হলে ও সঠিকভাবে চিকিৎসা পেলে নিরাময়যোগ্য। এখনও বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে চতুর্থ স্থানে এর অবস্থান। ২০১৮ সালে এই ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে তিন লাখের বেশি নারী। শতকরা ৯০ ভাগ মৃত্যু হয়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। এতে প্রতিফলিত হয় বৈশ্বিক অসাম্যের চিত্র। জরায়ুমুখের ক্যান্সারের এই বিপুল বোঝার কারণ স্বাস্থ্যসেবায় সীমিত প্রবেশাধিকার, স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা সুবিধা গড়ে না উঠা।
উল্লেখ্য, জানুয়ারি মাসকে সচেতনতা মাস হিসেবে পালনের পাশাপাশি ২০১৮ সাল থেকে জানুয়ারির দ্বিতীয় শনিবার বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালন করে আসছে মার্চ ফর মাদার (জননীর জন্য পদযাত্রা) নামের প্ল্যাটফর্ম। আজ ৫ম বারের মত এই দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ১৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে গোলটেবিল আলোচনা, পদযাত্রা ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট গাইনি অনকোলজিস্ট ও কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবেরা খাতুন। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নবনিযুক্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডা. হালিদা হানুম আখতার, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক সারিয়া তাসনিম, ঢাকা মেডিকেল কলেজের গাইনি অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এস এম সাহিদা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের গাইনি অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ফৌজিয়া হোসেন, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের গাইনি অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক রোকেয়া আনোয়ার, রেডিয়েশন অনকোলি বিভাগের অধ্যাপক রাকিব উদ্দিন, অনকোলজিস্ট প্রফেসর মো. খোরশেদ আলম, নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক, বাংলাদেশ ওয়াইডব্লিউসি-এর জাতীয় সেক্রেটারি জেনারেল হেলেন মনিষা সরকার, কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টারের সেক্রেটারি এবং সিইও মোসাররাত জাহান সৌরভ, হারমনি ট্রাস্টের হেলথ কেয়ার প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা শাহিদা সুলতানা।
আলোচনা শেষে জননীর জন্য পদযাত্রা ও তথ্যসমৃদ্ধ লিফলেট বিতরণ করা হয় প্রেস ক্লাব থেকে বিজয়নগর, কাকরাইল, মালিবাগ হয়ে মগবাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত।
Discussion about this post