হার্টবিটডেস্ক
নারায়ণগঞ্জে শেখ রেহানা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অনুমোদন করেছে সরকার। আজ মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৯ এ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘এতদ্বারা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতায় নারায়ণগঞ্জ জেলায় ‘শেখ রেহানা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ’ প্রতিষ্ঠার সরকারি মঞ্জুরি জ্ঞাপন করাপ হলো।’
যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জারি করা এ আদেশের অনুলিপি পরবর্তী কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার লক্ষে সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে দেশে ৩৯টি সরকারি মেডিকেল কলেজসহ শতাধিক মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি অনেক মেডিকেলের পড়ার মান নিয়েও রয়েছে ব্যাপক প্রশ্ন। এ পরিস্থিতিতে নতুন মেডিকেল প্রতিষ্ঠা না করে দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে মেডিকেল শিক্ষার মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘মেডিকেল কলেজে ভালো মানের শিক্ষক, পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতি থাকা জরুরি। যদি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার পর্যাপ্ত পরিবেশ না থাকে, তবে ব্যাঙের ছাতার মতো কলেজ করে লাভ নেই। প্রতিষ্ঠান যদি মানসম্মত হয়, তবে ভালো চিকিৎসক তৈরি হয়। এলাকার মানুষ ভালো সেবা পায়, সর্বোপরি দেশ উপকৃত হয়। মেডিকেল কলেজে ভালো চিকিৎসক তৈরির যথাযথ সুযোগ থাকতে হবে। তা না হলে এই চিকিৎসক দিয়ে লাভ নেই। এ বিষয়ে সকলের নজর দেওয়া উচিত।’
‘মেডিকেল কলেজ বিশেষত সরকারি মেডিকেলগুলোতে ভালো চিকিৎসক তৈরি করতে হবে। তা না হলে চিকিৎসক সমাজ গালি খাবে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। শুধুমাত্র বানানোর জন্য মেডিকেল না বানিয়ে মানের দিকে নজর রাখতে হবে’, যোগ করেন অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ।
স্বাধীনতা পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক ডা. টি এ চৌধুরী বলেন, ‘সময় একটু বেশি লাগলেও আমরা চাই দেশে কেবলমাত্র এমন চিকিৎসক তৈরি হোক যারা যে কোনো মাপকাঠিতেই অন্যান্য দেশের চিকিৎসকের চেয়ে নিম্নমানের হবেন না। দেশে গত কয়েক দশকে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে অনেক মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেগুলোর অধিকাংশই মুনাফাভিত্তিক, যাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো এই মেডিক্যাল কলেজগুলো আপন করে এর মাধ্যমে টাকা রোজগার করা, সমাজের উন্নতি করা নয়। অনেক মেডিকেল কলেজে সত্যিকারের চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নাই, শিক্ষক নাই, রোগী নাই। অথচ পাসের হার ৮০-৯০%। বেশ কিছু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে মেডিকেল শিক্ষা দেওয়ার নাম করে যদি আমরা নিম্নমানের চিকিৎসক তৈরি করি এটা কি ঠিক হবে? প্রশ্ন উঠতে পারে, এই সমস্ত মেডিকেল কলেজ থেকেও শেষ পর্যন্ত ভাল বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বের হয়েছে। সেটা হয়েছে ব্যক্তি বিশেষের নিজস্ব প্রচেষ্টায়। বেশ কিছু মেডিকেল কলেজ এ শিক্ষার মান এতটাই নিচু যে সেখান থেকে পাস করা ডাক্তারদের যোগ্যতা নিয়ে আমাদের নিজেদের মনেই সন্দেহের উদ্রেক হচ্ছে।’
তাই নতুন করে প্রতিষ্ঠা না করে বিদ্যমান কলেজগুলোর মানোন্নয়নের বিষয়ে পরামর্শ দেন বাংলাদেশের গাইনোকোলজি এন্ড অবস্টেটিক্স বিষয়ের কিংবদন্তী অধ্যাপক ডা. টি এ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আপাতত নতুন মেডিকেল কলেজ না করে যেগুলো আছে সেগুলো মানসম্মত করার চেষ্টা করা উচিত। আমার মতে, দেশে এখন যে শতাধিক মেডিকেল কলেজ আছে তা আমাদের চিকিৎসকের প্রয়োজন আপাতত মিটাতে সক্ষম।’
Discussion about this post