অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম
গত দুই বছর ধরে চলা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারির অবসান ঘটবে- এমন আশা ছিল সবার। কারণ, টিকাদানে গতি বাড়ার পাশাপাশি সংক্রমণ ও মৃত্যুও অনেকটা কমে আসছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন এখন বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে দেড়শর বেশি দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কয়েকটি দেশ। প্রতিবেশী ভারতে বিশেষ করে বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ হুহু করে বাড়ছে।
দেশে এ পর্যন্ত ১০ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের। কারণ, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষের যাতায়াত রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ কেবল আফ্রিকার সাতটি দেশ থেকে আগতদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বাকি দেশগুলোর বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই। একইসঙ্গে ওমিক্রন ঠেকাতে সরকারের প্রস্তুতিও চোখে পড়ছে না। বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসাসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কেও সবাই অন্ধকারে রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রস্তুতিতে ব্যাপক ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। তবে ওমিক্রন সংক্রমণপ্রবণ হলেও হাসপাতালে ভর্তির হার অনেক কম। একইসঙ্গে মৃত্যুও কম। কিন্তু অতীতে দেখা গেছে, ভাইরাস রূপ বদল করে ভয়াবহ হয়। সেটি বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজন আছে।
বিদেশ থেকে আগতদের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিদেশ থেকে আগতদের ক্ষেত্রে পিসিআর টেস্ট নেগেটিভ হয়ে প্রবেশ করতে হবে এবং সংক্রমণপ্রবণ দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন রাখতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। রাস্তাঘাট, শপিংমল, বাজার, পরিবহন কোনো জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করছে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রধান ও প্রথম শর্ত মাস্ক ব্যবহার করতেই হবে। কারণ হাঁচি-কাশি থেকে করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কিন্তু সেই মাস্ক ব্যবহারে মানুষ উদাসীন। এরপর দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত না ধুয়ে মুখ, চোখ ও নাক স্পর্শ করা যাবে না। কারণ হাত না ধুয়ে এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্পর্শ করলে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁঁকি থাকে। তৃতীয়ত, জনসমাগম এড়িয়ে চলা। কিন্তু কোনোভাবেই মানা হচ্ছে না।
রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ চলছে। নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। বিয়েসহ সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানও সমান তালে চলছে। বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। অথচ কোথাও মাস্কের ব্যবহার নেই। আবার টিকা গ্রহণের পর অনেকের ধারণা, করোনা তাদের কিছু করতে পারবে না। এটি ভুল। টিকা আপনাকে সুরক্ষা দেবে ঠিক। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে, মাস্ক ব্যবহার না করলে সংক্রমণ থেকে রক্ষা মিলবে না। সুতরাং টিকা নিলেও আপনাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কিন্তু দেখা যায়, অধিকাংশ তা মানছে না। এর মধ্য দিয়ে ভয়াবহ সংক্রমণ ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করলে দেখা যাবে, সংক্রমণ হার প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। মৃত্যুও বাড়তে শুরু করেছে। সুতরাং সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
Discussion about this post