হার্টবিট ডেস্ক
মস্তিস্কের জটিল এক অপারেশন সম্পন্ন করে চট্টগ্রামে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বিশেষায়িত চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল। এক মুমূর্ষু রোগীর মস্তিস্কের রক্তক্ষরণ হয়ে জমাট বেঁধে যাওয়ায় মাথার খুলি খুলে ব্রেইনের পর্দার নিচে গিয়ে নতুন রক্তক্ষরণ বন্ধ করা এবং জমাট বাঁধা রক্তগুলো বের করে আনার এমন জটিল এক অস্ত্রোপচার সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন হাসপাতালটির একদল চিকিৎসক। নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নিউরো সার্জন ডা. মঈনুদ্দীন মো. ইলিয়াস ।
নগরের ইপিজেড এলাকার বাসিন্দা মো. ফারুক(৬৫ বছর), সম্প্রতি মস্তিস্কের এক জটিল সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। পরে নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারি অধ্যাপক ডা. মঈনুদ্দীন মো. ইলিয়াসকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। রোগীর সার্বিক দিক বিবেচনা করে তিনি রোগীকে অপারেশন করানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। রোগীর স্বজনদের সম্মতি নিয়ে প্রথমবারের মতো হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে শুরু হয় জটিল এই রোগের অপারেশন কর্মযজ্ঞ। হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের একদল চিকিৎসক সফলভাবে শেষ করেন অপারেশনটি। রোগী এখন পুরোপুরি সুস্থ আছেন ।
সফল এই অপারেশন টিমে ছিলেন অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অলক নন্দী, কনসালট্যান্ট ডা. ইফতেখার তানিম, নিউরোসার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. উযায়ের আফিফ রোহাজ, ডা. অলক চক্রবর্তী, ডা. নাফিসা, ওটি ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহানা আক্তারসহ অন্যান্য নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। এ প্রসঙ্গে ডা. মঈনুদ্দীন মো. ইলিয়াস বলেন, ‘এটি একটি জটিল অপারেশন ছিলো । রোগীর সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা দ্রুত অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিই। অপারেশনটি ছিলো Burr Hole And Evacuation Of Acute On Chronic Subdural Hematoma । সবার প্রচেষ্টায় অপারেশনটি সফলতার মাধ্যমে শেষ করতে সক্ষম হই। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় আনন্দের। চট্টগ্রামবাসীর জন্যও এটি একটি বড় সুসংবাদ।’
হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম আজাদ বলেন, ‘কম টাকায় সহজলভ্য সেবা পেতে হাসপাতালটিতে সকল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে এখানে বেশকিছু জটিল অপারেশনও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে যে অপারেশন করতে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করতে হয়; সেটি এখানে করা যাচ্ছে অনেক কমে। কম টাকায় সাধারণ মানুষদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে নতুন কমিটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এখানে প্রতিদিন অনেক গরিব রোগী বিনামূল্যে ও কম টাকায় চিকিৎসা নিতে পারেন। হাসপাতালটি বর্তমানে এই অঞ্চলের গরিব ও অসহায় রোগীদের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে।’
অপারেশনের পর সুস্থ হওয়া মো. ফারুক বলেন, ‘জটিল অপারেশন করা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তাছাড়া টাকার বিষয়টিও একটি বড় কারণ ছিল।এই হাসপাতালের একদল চিকিৎসকের নেতৃত্বে সফলভাবে নামমাত্র খরচে জটিল অপারেশন সম্পন্ন হওয়ায় সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
এর আগে মা ও শিশু হাসপাতালে বেসরকারি পর্যায়ে প্রাপ্তি দেবী নামে এক শিশুর প্রথমবারের মতো ব্রেইন সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির ট্রেজারার অধ্যক্ষ লায়ন ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য কম টাকায় ভালো চিকিৎসাসেবা। সবার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে যা যা করণীয় সবই করা হচ্ছে এখানে।’
Discussion about this post