সালেহ টিটু, বরিশাল
চিকিৎসকের কাছে গেলে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে একডজন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লেখেন না চিকিৎসক। রোগীদের এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে এবার ব্যতিক্রম ব্যবস্থা নিয়েছে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগ।
আউটডোরে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করেছেন এই বিভাগের চিকিৎক। অর্থোপেডিক বহির্বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মাসরেফুল ইসলাম সৈকত রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে সিল দিয়ে দেন এই মর্মে, সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এই মেডিক্যাল থেকেই করতে হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, এতে দালালের খপ্পড়ে পড়বেন না রোগীরা।
এদিকে, আউটডোরে অর্থোপেডিকের রোগীরা যাতে সহজে চিকিৎসাসেবা পান সে জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছেন এই চিকিৎসক। পদক্ষেপগুলো ফেসবুকেও তুলে ধরেছেন চিকিৎসক সৈকত। শুধু ফেসবুকে প্রচার নয়, বিষয়গুলো উল্লেখ করে তিনি আউটডোরের সামনে বিলবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম, শের-ই- বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান ডা. মনিরুজ্জামান শাহিনের সমন্বয়ে নতুন নিয়ম চালু করেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক সৈকত।
চিকিৎসক সৈকত বলেন, আগে অফিসকালীন দুপুর ২টার পর প্লাস্টার, ড্রেসিং এবং সেলাই কাটা নির্ধারিত থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হতো। অর্থ সংকটে থাকা রোগীরা বহির্বিভাগে বেশি আসেন। সেখানে আবার রাত হলে হোটেলে থাকা এবং খাবারসহ আর্থিক সমস্যা পড়তে হতো। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় অফিস সময়ের পর কাজ হওয়ায় স্টাফদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ছিল বহু। বিষয়গুলো অনুধাবন করে দুপুরের পরিবর্তে সকাল ৯টা থেকে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করি। এতে রোগীদের দুর্ভোগ কমেছে।
তিনি বলেন, প্লাস্টার করার ক্ষেত্রে নতুন রোগী এবং পাকা প্লাস্টারের ক্ষেত্রে দূরবর্তী জেলা-উপজেলার রোগীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রে সিরিয়াল দিতে হয়। রোগীর চাপ থাকায় তিন কক্ষে প্লাস্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আউটডোরে অর্থোপেডিক বিভাগের সামনে লাগানো রয়েছে বরিশাল নগরীর রোগীরা পাকা প্লাস্টারের জন্য ১০৯ নম্বর কক্ষে যোগাযোগ করে সিরিয়াল দিতে হবে। এ ছাড়া অর্থোপেডিক রোগীদের প্লাস্টার অপসারণে পাঁচ তলায় যাওয়ার জন্য বলা হয়। সেখানে রোগীরা কী কী বিনামূল্যে পাবেন তাও লেখা রয়েছে অপারেশন থিয়েটারের সামনে। যাতে রোগীরা কোনোভাবে প্রতারিত না হন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার থেকে কী পরিমাণ ওষুধ ও ব্যান্ডেজ ফ্রি দিচ্ছে রোগীদের। তা প্রতিদিন আপডেট করা হয়।
চিকিৎসা নিতে আসা নলছিটির বাবুল খাঁসহ একাধিক রোগী জানান, বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিতে আসার সময় থাকার ব্যবস্থা নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে আসার পর সব ধারণা বদলে গেছে। চিকিৎসকের পরামর্শে অল্প টাকায় মেডিক্যাল থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পায়ের প্লাস্টার করিয়েছি। এভাবে প্রত্যেক রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন।
চিকিৎসক সৈকত বলেন, প্রতিদিন অন্তত ২০০ রোগী অর্থোপেডিক বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। রোগীর চাপ থাকায় একজন চিকিৎসকের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না। এ জন্য আন্তঃবিভাগ থেকে সিনিয়র চিকিৎসক এবং আবাসিক সার্জনদের অনুরোধ করে নিয়ে আসা হয়। তারাও বেলা ১১টা থেকে অর্থোপেডিক আউটডোরে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেন।
আগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মোবাইল ও টাকা চুরি হতো। চুরি রোধে উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি সিসি ক্যামেরা মনিটরিংয়ের জন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে করে চুরিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।
চিকিৎসক সৈকত বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে আমি এমবিবিএস পাস করেছি। ইন্টার্নি করার সময় রোগীদের বিভিন্ন সমস্যা আমার নজরে আসে। ওই সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগে নিয়েছি এখন। তবে এটা স্বার্থক হয়েছে হাসপাতালের পরিচালক ও অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের সমন্বয়ের কারণে। এ জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, অর্থোপেডিক বিভাগে বিশেষ করে আউটডোরের রোগীরা যাতে ভালো চিকিৎসাসেবা পান, সে জন্য ডা. সৈকত একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা তার উদ্যোগে সহায়তা করেছি। এতে রোগীরা উন্নত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। আশা করছি, অন্য বিভাগের চিকিৎসকরাও একই ধারায় তাদের কাজ পরিচালনা করবেন। courtesy- Bangla Tribune
Discussion about this post