হার্টবিট ডেস্ক
স্বাস্থ্য খাতে অসংখ্য অবকাঠামো থাকলেও পর্যাপ্ত জনবলের ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় জনবলের এখনো কমতি রয়েছে। আমাদের আরও জনবল প্রয়োজন।
আজ সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ফর মেন্টাল হেলথ’ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে জনবল একটি বড় বিষয়। আমাদের স্পেশালিস্ট চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের অনেক চিকিৎসক প্রয়োজন। বিশেষ করে সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোলজিস্ট, কার্ডিয়াক সার্জন, এনেসথেসিস্টসহ বেসিক সাবজেক্টের অনেক স্পেশালিষ্টের ঘাটতি রয়েছে। আমরা এই ঘাটতিগুলো পূরণ করার চেষ্টা করছি।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের যে জনবল রয়েছে, তা সুষম রেশিও অনুযায়ী নেই। দেখা গেল এনেসথেসিস্ট আছে ৫০০ জন, আর সার্জন হলো দুই হাজার। আবার দেখা যায় গাইনিলজিস্ট যা আছে, সেই তুলনায় সার্জন কম। আমাদেরকে এই বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তা করছি হাসপাতালগুলোকে ডিসেন্ট্রালাইজড (বিকেন্দ্রীকরণ) করে দেয়ার জন্য। সেটি হবে বিভাগ ভিত্তিক, ঢাকামুখী নয়। আমরা দেখি, যেকোনো রোগ নিয়েই রোগীরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসে। এতে রোগীরও কষ্ট হয়, রোগীর সেবা দিতে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও ঝামেলা হয়। কাজেই এটিকে ডিসেন্ট্রালাইজড করার কাজ শুরু করেছি।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রতিটি বিভাগে আমরা ক্যান্সার ইউনিট, কিডনি ইউনিট, হার্ট ইউনিট করার কাজ শুরু করেছি। কারণ, আমরা দেখেছি কত মানুষ কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য মৃত্যুবরণ করে। গরিব লোকজনতো পায়ই না। তাদের ঢাকায় আসাও সম্ভব নয়। সপ্তাহে দুই-তিনদিন ডায়ালাইসিস লাগে, দরিদ্রদের পক্ষে নিয়মিত ঢাকায় আসা সম্ভব নয়। সেজন্য বিভাগীয় পর্যায়ে আমরা কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন করছি। শুধু তাই নয় আমরা প্রতিটি জেলা হাসপাতালে ১০ বেডের আইসিইউ ও ১০ বেডের ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরু করে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা হলো আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে আরও আটটি হাসপাতাল তৈরি করব। তার মধ্যে একটি থাকবে অর্থোপেডিক ইউনিট, আরেকটি হবে নিউরোসায়েন্স ইউনিট এবং আরেকটি হবে মেন্টাল হেলথ ইউনিট।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসার সংকট নিরসনে জেলায় জেলায় মেন্টাল হেলথ কর্নার বা সাইকিয়াট্রিক সেন্টার তৈরি করা হবে।’
মানসিক স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আত্মহত্যা বা বিবাহবিচ্ছেদের ক্রমবর্ধমান হারের পেছনে মানসিক সমস্যা প্রধানত দায়ী। ব্যক্তির বিষণ্নতার প্রভাব পড়ছে জীবনে, পরিবারে। তছনছ হচ্ছে সংসার। বিবাহবিচ্ছেদ, আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনার আগে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। তাদের অনুষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে গুরুত্ব দেয়। আমরাও এ বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি। স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ফর মেন্টাল হেলথ কার্যক্রমের আওতায় বিশ্বের ১২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৬ নম্বরে। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ধন্যবাদ।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বার্ন জং রানা, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন প্রমুখ।
Discussion about this post