হার্টবিট ডেস্ক
করোনাভাইরাসের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট থেকে শক্তিশালী হলেও ওমিক্রনের উপসর্গ মৃদু, তবে অস্বাভাবিক। গত রোববার (২৮ নভেম্বর) দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক এসব তথ্য জানান। তিনিই প্রথম শনাক্ত করেন করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্টটি। তিনি দাবি করেন, অপেক্ষাকৃত কমবয়সী পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ওমিক্রনে। এদিকে, শীর্ষ মার্কিন স্বাস্থ্যবিদদের বক্তব্য হচ্ছে, করোনা পুরোপুরি নির্মূল অসম্ভব। টিকাগ্রহণের মাধ্যমে পোলিও-হামের মতোই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে করোনাভাইরাসকে।
গ্রিক বর্ণমালার ১৫তম অক্ষর ‘ওমিক্রন’ অনুযায়ী করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের নামকরণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দেশে দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়লেও ধরনটি সম্পর্কে এখনও খুব একটা তথ্য মেলেনি বিশেষজ্ঞদের কাছে।
রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে তথ্য দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি। গত ৯ নভেম্বর নিজ হাসপাতালে তিনি প্রথম শনাক্ত করেন বি১১৫২৯ (B11529) ভ্যারিয়েন্টটি। তিনি জানান, আক্রান্তদের মধ্যে অস্বাভাবিকতা থাকলেও এই ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গ মৃদু।
দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি বলেন, প্রতিদিনই দক্ষিণ আফ্রিকায় বাড়ছে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তাদের মাঝে মৃদু উপসর্গ রয়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মতো শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রচণ্ড কষ্ট বা অক্সিজেন স্বল্পতার অস্বাভাবিকতা নেই। অসুস্থরা ঘ্রাণ বা স্বাদের অনুভূতিও হারাননি। তাই এ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ দেখছি না। চারপাশের হাসপাতালে যে উপচে পড়া রোগীদের ভিড়, সেটাও এই ভ্যারিয়েন্টের নয়। তারা ঘরে বসেই নিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা।
অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজির পর্যবেক্ষণ অনুসারে, অপেক্ষাকৃত মধ্যবয়সী এবং পুরুষরা আক্রান্ত হচ্ছেন ওমিক্রনে। তারা অবসাদ অনুভব করলেও শারীরিক পরিস্থিতি সবারই স্থিতিশীল। তাই, এখনই ভ্যাকসিন নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা ভুল।
অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি আরও বলেন, মূলত তরুণ প্রজন্মের পুরুষরা আক্রান্ত হচ্ছে ওমিক্রনে। বেশিরভাগই ৪০ বছর বা তার কমবয়সী। তাদের মাঝে অবসাদ লক্ষ্য করছেন চিকিৎকরা। মাথা ও শরীরে ছিল হালকা ব্যথা। কারো শুকনো কাশি এবং মৃদু গলাব্যথা দেখেছেন চিকিৎসকরা। শুধু ৬ বছরের একটি শিশু ছাড়া কারো মাঝেই তীব্র জ্বর দেখিনি। তারও চিকিৎসা শুরুর পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক হয়েছে শরীরের তাপমাত্রা। তাই এখনই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক হবে না।
এদিকে, নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে আফ্রিকা মহাদেশের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির বিরোধিতা করেছেন মার্কিন শীর্ষ স্বাস্থ্যবিদ অ্যান্থনি ফাউচি। তার বক্তব্য, করোনা নিয়েই চলতে হবে মানবজাতিকে। তিনি বলেন, ওমিক্রনের জিনগত রূপান্তর স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করছে, মানবশরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কৌশলে এড়াতে পারে এই ভ্যারিয়েন্ট। টিকাগ্রহণের পরও কেউ আক্রান্ত হতে পারে। সবাইকে বুঝতে হবে, কোনোভাবেই করোনাকে পুরোপুরি নির্মূল অসম্ভব। পৃথিবী থেকে একমাত্র গুটিবসন্তকে হঠানো গেছে। পোলিও-হামের মতোই সারাজীবন করোনাকে সাথে নিয়ে চলতে হবে। সেক্ষেত্রে, ভ্যাকসিন একমাত্র সমাধান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন ভ্যারিয়েন্টকে উদ্বেগজনক আখ্যা দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ওমিক্রন ৩২ বার রূপ বদল করেছে স্পাইক প্রোটিনে। সাধারণত ভাইরাসের বারবার রূপান্তরই সেটিকে আরও বেশি সংক্রামক এবং বিপজ্জনক করে তোলে।
Discussion about this post