ডা. মো. আরমান বিন আজিজ
চোখের সার্বিক সুস্থ থাকা কিছু পুষ্টির ওপর নির্ভর করে। যেমন ভিটামিন এ এবং সি, ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারটিনয়েড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। খাবারে থাকা এ উপাদানগুলো আপনার চোখের দৃষ্টি সাবলীল রাখতে সাহায্য করবে। খাদ্যাভ্যাসে কিছু পুষ্টিকর খাবার রাখলে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারবে।
চোখে ছানি পড়া দূর করতে যা খাবেন
আগেই বলা হয়েছে, পুষ্টিকর খাবার খেলে তা আপনার চোখের বিভিন্ন সমস্যাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য দূরে রাখবে। চোখে ছানি পড়া দূর করতে যে খাবারগুলো খেতে হবে, সেগুলো হলো:
রসুন
রসুনের গুনাগুণ বর্ণনাতীত। চোখে ছানি পড়া রোগের জন্য রসুন জাদুর মতো কাজ করে। চোখের লেন্সটি সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে যে রকম পরিষ্কার মনে হবে, রসুন ঠিক সেই কাজটি করে থাকে। তাই প্রতিদিন রসুনের ২-৩টি কোয়া খেতে হবে।
কাঁচা সবজি
কাঁচা সবজি পুষ্টিকর। বিশেষ করে ভিটামিন এ-এর উৎস হিসেবে পরিচিত খাবারগুলো চোখের স্বাস্থ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় লেবুর রস ও অলিভ অয়েল মিশ্রিত সালাদ রাখুন। বিভিন্ন রঙের সবজি চোখে ছানি পড়া সমস্যা সমাধানের জন্য উপকারী।
সবুজ শাক ও সবজি
আমাদের দেশের বিভিন্ন রকম সবুজ শাক পাওয়া যায়। যেমন, পালং, পুঁই শাক, কচু শাক, সরিষা শাক, লাউ শাক ইত্যাদি। এসব সবুজ শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সেই সঙ্গে এগুলো ম্যাংগানিজের খুব ভালো উৎস। এগুলো চোখের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখের রেটিনাকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে সবুজ শাক। দৃষ্টিশক্তি ভালো করতেও সাহায্য করে এগুলো। শাক বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা চোখে ছানি পড়া রোগ প্রতিরোধ করে। তাই প্রতিদিন কোনো না কোনো শাক খেতে হবে।
দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে হলে প্রতিদিন সবুজ শাকের সঙ্গে সবুজ অন্যান্য সবজিও খেতে হবে। যেমন, পাতা কপি, শালগম, বরবটি, পেঁপে ইত্যাদি। সবুজ শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, লুটেইন এবং ম্যাংগানিজ থাকে যা চোখের জন্য অনেক উপকারী।
পালংশাক
পালংশাকে প্রচুর ভিটামিন এ রয়েছে যা চোখের কর্নিয়া রক্ষা করে। এতে থাকা লুটেইন সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে চোখ রক্ষা করে এবং ম্যাংগানিজ চোখের দৃষ্টি উন্নয়নে সাহায্য করে। বেশি উপকারিতা পেতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পালংশাকের জুস খাওয়া খেতে পারেন। এ ছাড়া পালংশাক বিভিন্ন সালাদে দিয়ে অথবা রান্না করেও খাওয়া যেতে পারে।
দুধ ও কাজুবাদাম
চোখে ছানি পড়লে চোখ জ্বালা পোড়া করে এবং লাল হয়ে যায়। বিশুদ্ধ দুধের মধ্যে সারা রাত কাজুবাদাম ভিজিয়ে রেখে সেই দুধ যদি চোখের পাতায় লাগানো হয় তাহলে চোখের জ্বালা পোড়া করা এবং লাল হয়ে যাওয়া কমে যায়।
গ্রিন টি
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় গ্রিন টি চমৎকার কাজ করে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা চোখকে সজীব রাখে।
গম ঘাস
গম ঘাস বা গমের কচি চারা চোখে ছানি পড়া রোগ দূর করতে সক্ষম। এ জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় গম ঘাসের জুস রাখুন।
জাম বা বেরি জাতীয় ফল
জাম জাতীয় ফল বিশেষ করে ব্লু বেরি এন্থোসায়ানসাইড সমৃদ্ধ। এর ফ্লাভনয়েড চোখের রেটিনা ও লেন্সকে জারণ এর হাত থেকে রক্ষা করে।
পেঁপে
পেঁপের মধ্যে যে এনজাইম থাকে তা প্রোটিন জাতীয় খাবার হজমে সহায়তা করে। চোখে ছানি আছে এমন অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাঁদের প্রোটিন হজমে সমস্যা থাকে। এই প্রোটিন চোখের লেন্সে গিয়ে জমা হয়ে ছানি তৈরি করতে পারে। তাই ছানি প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত পেঁপে খাওয়া উচিত।
ভিটামিন সি
কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, শরীরের অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে চোখের লেন্স ভিটামিন সি বেশি ধারণ করে। যদি চোখে ছানি হয়ে থাকে তাহলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে সম্পূরক ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।
লেখক: চিকিৎসক এবং সাবেক ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও প্রশিক্ষক, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
Discussion about this post