হার্টবিট ডেস্ক
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আটজনকে দুই বছর, দুজনকে দেড় বছর এবং বাকিদের এক বছর মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে শাস্তি হওয়া একজনের এরই মধ্যে এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন হয়ে যাওয়ায় তিনি এ সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ছেন না।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) একাডেমিক কাউন্সিলের সভা শেষে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চমেক অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার।
তিনি বলেন, ‘গত ২৯ এবং ৩০ অক্টোবর সংঘর্ষের পর সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তারা তদন্ত করে গতকাল (সোমবার) প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আজ একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় প্রতিবেদনটি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এরপর ৩১ ছাত্রকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয় এবং ২৭ নভেম্বর কলেজ ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
প্রতিবেদনে সংঘর্ষের নেপথ্যে কী উল্লেখ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চমেকে সংঘর্ষের নেপথ্যে একমাত্র আধিপত্য বিস্তারকে দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। এর বাইরে তারা কিছু মন্তব্য করেননি।
এর আগে ৩০ অক্টোবর চমেকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় চমেক ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের ওইদিন সন্ধ্যার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি পক্ষ মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং অন্যটি সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের। মৃত্যুর পর মহিউদ্দিন চৌধুরী সমর্থিত গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তার সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিভক্তির এ প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনেও।
দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের গ্রুপটি। আ জ ম নাছির চমেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিও ছিলেন দীর্ঘদিন। গত বছরের ২০ আগস্ট এ পদে আসেন ব্যারিস্টার নওফেল।
সংশ্লিষ্টদের মত, এর পর থেকে নওফেল গ্রুপ চমেক ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলে নাসির গ্রুপের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। ছোটখাটো সংঘর্ষের পর গত ২৭ এপ্রিল চমেক ক্যান্টিনে এক ছাত্রলীগ নেতাকে কটূক্তির ঘটনায় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন। এ ঘটনার পর পাঁচলাইশ থানায় উভয় গ্রুপ পাল্টাপাল্টি মামলা করে। একইসঙ্গে চমেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট ডাকেন। পরে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর দিবাগত রাত ও ৩০ অক্টোবর উভয় গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই গ্রুপের অন্তত তিনজন আহত হন। আহতরা হলেন নাইমুল ইসলাম (২০), মাহফুজুল হক (২৩) এবং আকিব হোসেন (২১)। এর মধ্যে জীবন সংশয়ে থাকা আকিব সম্প্রতি হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ী ফিরেছেন। তিনি এখন আশংকামুক্ত।
এ ঘটনায় গত ৩১ অক্টোবর শনিবার জরুরি বৈঠকে বসে কলেজ প্রশাসন। বৈঠক শেষে মেডিকেল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে আবাসিক শিক্ষার্থীদের শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
Discussion about this post