হার্টবিট ডেস্ক
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে মলনুপিরাভির অ্যান্টিভাইরাল ট্যাবলেটের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। চারদিন আগে যুক্তরাজ্য সরকার এ ওষুধের অনুমোদন দেয়।
সোমবার (৮ নভেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক অজিউল্লাহ।
তিনি বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে মলনুপিরাভিরের জরুরি ব্যবহারে অধিদফতর প্রাথমিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে।
জানা গেছে, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশে মলনুপিরাভির উৎপাদন ও বিপণনের অনুমতি চেয়েছে।
বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান জানান, গতকাল সোমবার (৮ নভেম্বর) বেক্সিমকোকে অনুমোদন দেয়া হয়৷ আর আজকে এসকেএফ নামের প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। মোট ৫ দিন ৮টি করে ক্যাপসুল খেতে হবে।
তিনি আরও জানান, এই ওষুধটির ফলাফল বিশ্বের কয়েকটি দেশের পাশাপাশি আমাদের দেশেও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এটি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। টিকা নিলেও এই ক্যাপসুল নেয়া যাবে বলে জানান তিনি। এই ওষুধটি ব্যবহারের ফলে মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনবে। তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, যেমন: হালকা মাথাব্যথা, জ্বর কিংবা গায়ে ব্যথা হতে পারে। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স তাদেরকে দেওয়া হবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই প্রথম এই ক্যাপসুল উৎপাদন করেছে। বিদেশে রফতানি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সর্দি-জ্বরের চিকিৎসার জন্য তৈরি করা মলনুপিরাভি ট্যাবলেটটি করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে। এই বড়ি সেবনে হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক কমেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ ট্যাবলেট তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানি। সম্প্রতি এই ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকারও।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি মের্ক মলনুপিরাভির নামে এই পিল বা মুখে খাওয়ার ওষুধ তৈরি করেছে। এই ওষুধ করোনাভাইরাসের বংশবিস্তার অকার্যকর করতে সক্ষম বলে দাবি করেছে প্রস্তুতকারী কোম্পানি।
পাশাপাশি, করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর সক্ষমতা মলনুপিরাভিরের রয়েছে বলেও বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা।
পিল প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, মলনুপিরাভির মানবদেহে প্রবেশকারী করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোডে সমস্যা সৃষ্টি করে ভাইরাসটির বংশবৃদ্ধি প্রায় স্থবির করে দেবে। আর এর ফলেই কমতে থাকবে করোনারোগীর গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও এ রোগে মারা যাওয়ার ঝুঁকি।
কর্মকর্তারা আরও জানান, বাজারে বর্তমানে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোর মূল কাজ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা, ভাইরাসকে অকার্যকর করা নয়। এক্ষেত্রে মলনুপিরাভিরই বিশ্বে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ওষুধ, যেটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ভাইরাসের প্রজনন ক্ষমতা অকার্যকর করতে সক্ষম। এ পর্যন্ত তিনটি মেডিকেল ট্রায়াল পার করেছে মলনুপিরাভির। প্রতিটি ট্রায়ালেই রোগীদের শারীরিক অবস্থার লক্ষণীয় উন্নতি দেখা গেছে।
Discussion about this post