হার্টবিট ডেস্ক
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় একটি জিনের সন্ধান পেয়েছেন। তাদের দাবি, নতুন শনাক্ত হওয়া এই জিন কোভিড সংক্রমণের কারণে ফুসফুস বিকল হওয়াএবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
বিজ্ঞানীরা আরও বলেছেন, দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশের শরীরে এই উচ্চ ঝুঁকির জিন থাকে। সেই তুলনায় ইউরোপীয়দের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশের শরীরে এই জিন আছে।
কেবল টিকা নেওয়ার মাধ্যমেই এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন ব্রিটেনের গবেষকরা।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত জনগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বা ঝুঁকির হার নির্ধারণে সম্প্রতি একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তাতে এই তথ্য এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।
দ্য নেচার জেনেটিক্স নামের একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে সম্প্রতি সেই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
জিনের ওপর চালানো গবেষণার পূর্ববর্তী ধারাবাহিকতামূলক পরীক্ষাসমূহ, সেইসঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং নতুন অণু সংক্রান্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এই নির্দিষ্ট জিনটির সন্ধান পেয়েছেন। কোভিডের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য দায়ী এই জিনটির নাম দেওয়া হয়েছে এলজেডটিএফএল১।
তারা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই জিনটি প্রায় দুই শতাংশ আফ্রিকান-ক্যারিবীয় অঞ্চলের মানুষের দেহে রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এছাড়া, ব্রিটেনে বসবাসরত ১.৮% পূর্ব এশীয় বংশোদ্ভুতদের শরীরে এই জিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক এই গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক জেমস ডেভিস বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই জিনটি সব ধরনের জনগোষ্ঠীর শরীরে সমান অনুপাতে না থাকার বিষয়টি করোনা বিষয়ক বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে তিনি এটিও বলেছেন যে, একজন মানুষের ঝুঁকি কম বেশি হওয়ার পেছনে অন্যান্য কারণও থাকে – বিশেষ করে বয়সের বিষয়টি।
‘কোন কোন জনগোষ্ঠীর জন্য কোভিডের ঝুঁকি বেশি থাকার পেছনে আর্থ-সামাজিক যে কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে সেগুলোরও অবদান থাকা সম্ভব,’- বলেছেন জেমস ডেভিস।
‘আমরা তো চাইলে বংশগতভাবে পাওয়া শরীরের জিন বদলে ফেলতে পারব না; কিন্তু এই গবেষণার ফলাফল এটা প্রমাণ করছে যে এই জিন যেহেতু একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য বাড়তি ঝুঁকির কারণ, তাই এই জনগোষ্ঠীর জন্য টিকা নেয়াটা বিশেষভাবে ফলদায়ক হতে পারে।’
ব্রিটেনের গবেষকরা বলছেন, এই জিন যাদের শরীরের আছে করোনাভাইরাস হলে তাদের ফুসফুস বেশি আক্রান্ত হবার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ফুসফুসকে বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে যে কোষের আস্তরণ থাকে, যা কোভিড সংক্রমণ হলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কাজ করে, ঝুঁকিপূর্ণ এলজেডটিএফএল১ জিন সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া নষ্ট করে দেয়।
ফুসফুসের আবরণের এই কোষগুলো যখন করোনাভাইরাসের মুখোমুখি হয়, তখন তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলের মধ্যে অন্যতম হল, কোষগুলো তখন চেহারা ও কার্যপদ্ধতি বদলে বিশেষ ধরনের কোষে রূপান্তরিত হয়ে যায় এবং ভাইরাসকে ঠেকাতে উদ্যোগী হয়।
করোনাভাইরাস কোন কোষের সাথে আটকে থাকার জন্য যে প্রোটিনের ওপর নির্ভর করে তার নাম এসিই-২। ফুসফুসের আবরণের কোষগুলো তাদের আচরণ বদলে ফেলে এই প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, ফলে এই প্রোটিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।
কিন্তু যাদের শরীরে ঝুঁকিপূর্ণ এলজেডটিএফএল১ জিন আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া একেবারেই কাজ করে না। ফলে কোভিডের জীবাণু ঢুকলে, তাদের ফুসফুসের কোন সুরক্ষা শরীর দিতে পারে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ ধরনের জিনটি ফুসফুসকে বিকল করে দিয়ে মৃত্যুর আশংকা বাড়িয়ে তোলে। তবে শরীরের অন্য রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এই জিন ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না।
পাশাপাশি, টিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ালে এই জিন সেটা নষ্ট করতে সক্ষম নয়। কাজেই টিকা কার্যকর থাকে বলে তারা বলছেন।এই গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, তাদের এই আবিষ্কারের ফলে সুনির্দিষ্টভাবে ফুসফুস বাঁচানোর জন্য বিশেষ ওষুধ উদ্ভাবনের পথ খুলে যাবে।
বর্তমানে করোনার চিকিৎসায় যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে তা শরীরের পূর্ণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করতে কাজ করে।
Discussion about this post