হার্টবিট ডেস্ক
কোনো কোনো বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড-১৯ মানবজাতির সঙ্গী হিসেবেই থেকে যাবে, অনেকটা ফ্লুর মতো। এর সঙ্গে আমাদের সহাবস্থান করতে হবে; এটি আমাদের কখনও ছেড়ে যাবে না। সেক্ষেত্রে এখন যেমন প্রতিবছর বাচ্চাদের এক ডোজ ফ্লুর টিকা দেওয়া হয়, তেমনি হয়তো কোভিডের টিকাও প্রতিবছর নিতে হবে। হোক। তবুও মহামারির এই তাণ্ডব থামুক।
এদিকে, এর মধ্যেই স্কুল থেকে নোটিশ এসেছে। ৩ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের কোভিডের টিকা দেওয়া হবে। অভিভাবকদের সম্মতিপত্র দরকার। কারণ, কোভিড টিকা নেওয়াও চীনে বাধ্যতামূলক নয়। যার ইচ্ছা নেবে, যার ইচ্ছা নেবে না। আমি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করে দিলাম। নিজে দু’ডোজ টিকা নিয়েছি। তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করিনি। তাই ছেলের ক্ষেত্রেও মনে সাহস পাচ্ছি বললেন এক অভিভাবক। এখন অপেক্ষার পালা। অবশ্য, ৯ নভেম্বরের আগে টিকা নেওয়া যাবে না। কোনো টিকা নেওয়ার পর পরবর্তী টিকার জন্য অন্তত ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হয়। এটাই নিয়ম।
চীনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন তিনটি কোভিড টিকা ৩ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের শরীরে জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সম্প্রতি। এর মধ্যে রয়েছে সিনোফার্মের তৈরি দুটি নিষ্ক্রিয় টিকা (inactivated vaccine) ও সিনোভ্যাক বায়োট্যাকের তৈরি একটি নিষ্ক্রিয় টিকা। চীনের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো জানিয়েছে, এই তিনটি টিকা শিশুদের জন্যও নিরাপদ ও কার্যকর বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
ওদিকে, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে আরও আগেই, গত জুলাই মাসে। এখন ৩ থেকে ১১ বছর বয়সীদের টিকার আওতায় আনা শুরু হলো। বেইজিং, শাংহাই, কুয়াংতুং, চিয়াংসু, চেচিয়াংসহ ডজনখানেক প্রাদেশিক পর্যায়ের এলাকার বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যেই ৩ থেকে ১১ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরি আমার ছেলের মতো লক্ষ-কোটি শিশু-কিশোর কোভিড টিকা গ্রহণ করবে। প্রথম পর্যায়ের টিকাদান কার্যক্রম ২০ নভেম্বরের মধ্যে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকাদান কার্যক্রম ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
শিশু-কিশোরদের কোভিড টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত কারণেই। চীনের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান টিকা পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ ওয়াং হুয়াছিং বলেছেন, কোভিড ভাইরাসের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি (herd immunity) গড়ে তোলার জন্য এটা জরুরি। বিশ্বজুড়েই এখন শিশু-কিশোরদের মধ্যে কোভিড সংক্রমণের হার বাড়ছে। কোনো কোনো দেশে তো এ হার বড়দের প্রায় কাছাকাছি। ফলে, শিশুদের জন্য কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি কম—এমন পুরাতন ধারণায় আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। আবার শিশু-কিশোররা যে-কোনো দেশের একটা বড় অংশ। তাদেরকে টিকা না-দিয়ে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা যাবে না।
এদিকে, চীনে একটা লম্বা সময় ধরে স্থানীয় সংক্রমণ ছিল না। বাইরে থেকে আক্রান্ত হয়ে যারা আসতেন, তাদের নিয়েই চীন তখন ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে এখানেও পরিস্থিতি পাল্টেছে। প্রায় প্রতিদিনই স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত রোগীর সন্ধান মিলছে চীনের বিভিন্ন স্থানে, যদিও সে সংখ্যা বড় না।
Discussion about this post