ডা. আজাদ হাসান
সম্প্রতি বিশ্ব ট্রমা দিবস, বিশ্বব্যাপী এই দিনটিকে গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়। যার উদ্দেশ্য দূর্ঘটনা বা ট্রমা জনিত কারণে সৃষ্ট মৃত্যু এবং অক্ষমতা প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার আবশ্যক তুলে ধরা।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে যে, ভারতে প্রতি মিনিটে সড়ক দুর্ঘটনার প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত বেশি। আর সমস্ত ট্রমাগুলির ২২.% সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ঘটে। জানা গেছে যে, বিশ্বে সড়ক দূর্ঘটনার কারণে প্রতি বছর প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ মারা যায় এবং কুড়ি (২০মিলিঃ) মিলিয়ন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) অনুসারে, ট্রমা সারা বিশ্বে মৃত্যু এবং অক্ষমতার প্রধান কারণ।
গবেষণায় আরো দেখা গিয়েছে যে, উন্নত বিশ্বের দেশগুলিতে ঘটে যাওয়া প্রায় ৫০% সড়ক দূর্ঘটনা আঘাতের পরে দ্রুত এবং যথাযথ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
এর জন্য যা প্রয়োজন তা হলোঃ
১) প্রাক-হাসপাতাল পরিচর্যা বা প্রি-হসপিটাল কেয়ার। অর্থাৎ দূর্ঘটনার স্থল হতে প্রাথমিক চিকিৎসা বা ফাস্ট এইড চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
২) জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সিং স্টাফ এবং সহযোগী স্বাস্থ্য কর্মীদের সঠিক জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্যারা-মেডিক্স স্টাফ সমন্বয়ে “রেসকিউ টীম” গঠন, ভিকটিমকে ঘটনা স্থল হতে যথাযথ ভাবে রেসকিউ করে হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) আধুনিক সরঞ্জাম সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্স ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৫) যেসব জেলার অভ্যন্তর দিয়ে ইন্টারসিটি রোডে গিয়েছে, সে সব জেলায় একটি করে “ট্রমা হাসপাতাল” নির্মাণ করা হোক। ইতিপূর্বে স্থাপিত ট্রমা হাসপাতাল সমূহের কার্যাবলী মূল্যায়ন করা হোক এবং সমস্যা সমূহ (যদি থাকে) চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হোক।
এ ধরনের ট্রমা জনিত আঘাত যেমন একজন ব্যক্তিকে শারীরিক ভাবে পংগু করে তোলে, তেমনি তাঁকে অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত করে এবং মানসিক ভাবেও চরম হতাশার মাঝে নিমজ্জিত করে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রিয়জনকে হারানোর পর যে মানসিক আঘাত, নিয়ন্ত্রণহীন মানসিক চাপে পড়েন, অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা তথা আর্থিক অক্ষমতার যে কঠিন সময় মোকাবেলা করেন, তা কেবল ভুক্তভোগী পরিবার বা ব্যক্তিরাই জানেন।
তাই “বিশ্ব ট্রমা দিবসে” আসুন আমরা সবাই একজন দূর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তির জীবনে সবচেয়ে সংকটজনক পরিস্থিতিতে “জীবন বাঁচানো এবং সুরক্ষার” গুরুত্ব উপলব্ধি করতঃ ট্রমাজনিত কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি হতে পরিত্রাণের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় একটি করে “ট্রমা সেন্টার” স্থাপনে উদ্যোগী হই এবং ট্রমা সেন্টারের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দেয়ার অঙ্গীকারবদ্ধ হই।
Discussion about this post