হার্টবিট ডেস্ক
টিকা না নিয়েও টিকার সার্টিফিকেট পাওয়ার তথ্য-প্রমাণসহ বাংলা ট্রিবিউন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে’ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কর্তৃপক্ষ জানায়, বিষয়টি অধিদফতরের নজরে এসেছে। তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয়েছে।
টিকা নয়, টাকা দিলেও পাওয়া যাচ্ছে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট
৩১ অক্টোবর ২০২১ তারিখ প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে টাকা দিয়ে টিকা কার্ড নেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়। কাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে যোগাযোগ করে নিজেকে প্রবাসী দাবি করে টিকার সার্টিফিকেট পাওয়া গেলো তার প্রমাণও হাজির করা হয়। মঙ্গলবার কিউআর কোড স্ক্যান করে দেখা যায়, সুরক্ষা ওয়েবসাইটে এটি ভ্যালিড (আসল) সার্টিফিকেট। অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে যাচাই করেও সনদটির বৈধতা পাওয়া যায়। ঘটনার তিনদিন পরও সার্টিফিকেটটি দেখতে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে টিকা দেওয়ার কেন্দ্র হিসেবে ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল দেখানো হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে নাম দেখা যায় মাসুদ রানা। তবে আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, তার নাম হোসেন আহমদ। ঢাকার মিরপুরের ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাসুদ রানা বা হোসেন আহমদ নামে কোনও ব্যক্তি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. বোরহান উদ্দিন হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাসুদ রানা অথবা হোসেন আহমদ নামে তার কোনও স্টাফ নেই। আর টিকা না নিয়েও টিকা কার্ড তার কেন্দ্র থেকে ইস্যু করা হয়েছে, এমন ঘটনা তার ‘নলেজে’ নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চক্রটি শুধু ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট নয়, টাকার বিনিময়ে ভ্যাকসিন দেওয়ার তারিখও বদলে দিতে পারে। সশরীরে কারও সঙ্গে দেখা করে না তারা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকলেও তারা আদৌ কোনও পদে আছেন কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
টিকা কার্যক্রম পরিচালনায় ‘সুরক্ষা’ সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের সিস্টেমস ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘সুরক্ষা’ তৈরি ও কারিগরি রক্ষণাবেক্ষণ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের মাধ্যমে হচ্ছে। তবে টিকা দেওয়া ও সার্টিফিকেট সংক্রান্ত তথ্যের ইনপুটসহ যাবতীয় কাজ অধিদফতরের লোকজন করে।
টিকা না নিয়ে টিকার সার্টিফিকেট কী করে পাওয়া গেলো জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনটি তাদের নজরে এসেছে এবং খুবই গুরুত্ব নিয়ে তারা বিষয়টি দেখছেন।
তিনি বলেন, “মানুষের উপকার করতে গিয়ে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর, সেটার ‘মিসইউজ’ হচ্ছে। একদল মানুষ এটাকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিল করছে।”
টিকার সার্টিফিকেট কীভাবে কারা দেয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা কেউ দেয় না। ডিজাইনটা এভাবে করা যে, টিকা নেওয়ার পর অটোমেটিক্যালি ডাউনলোড করতে পারবেন। কিন্তু ইনপুট দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। অর্থাৎ যেখানে টিকা নেওয়া হয়।’
টিকা না নিয়েও কিভাবে সার্টিফিকেট পাওয়া যায় প্রশ্নে তিনি বলেন, “যারা টিকা নিয়েছেন, অনেকে কেন্দ্র থেকে ‘আপগ্রেড’ করতে পারেনি। অর্থাৎ সিস্টেমে আপলোড করতে পারেনি। সেক্ষেত্রে ব্যাকএন্ডে কাজগুলো করার জন্য কিছু সময় চেয়েছিলাম। তাতে করে ৬৮১টি কেন্দ্রে আইডি-পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছিল। যাদের কাছে আইডি পাসওয়ার্ড দেওয়া ছিল… সে তো স্ক্যান করে এটা করে ফেলতে পারছে, একটা ব্যাকডেট দিয়ে দেখিয়ে দিতে পেরেছে। কিন্তু এখন বাধ্য হয়েই আমরা ব্যাকএন্ডের কাজ বন্ধ করে দিচ্ছি।…আপনাদের নিউজটা খুব কাজে দিয়েছে। ডেন্টাল কলেজের ঘটনাটা জানার পর সঙ্গে সঙ্গে আইসিটিকে অনুরোধ করলাম ব্যাকএন্ডে কাজ করার অপশনগুলো বন্ধ করে দিন। অথচ আমরা এটা চালু করেছিলাম মানুষের উপকারের জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “এ ঘটনার পর কাল (১ নভেম্বর) থেকে এটা ‘টোটালি অফ’ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এখন আবার আরেক সমস্যা দেখা দেবে। কাল থেকেই হয়তো শোনা যাবে, আপলোড করা যাচ্ছে না, সার্টিফিকেট ডাউনলোড করা যাচ্ছে না…এরকরম অনেক সমস্যা শুনবেন।”
‘আপাতত দুই সপ্তাহের জন্য ব্যাকএন্ডের কাজ বন্ধ রাখবো’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দেখি কী অবস্থা হয়। পরে অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে মানুষ টিকা দিতে পারছে কিনা সেটা দেখা। সব কেন্দ্রে তো পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়।’
কিন্তু টিকা না নিয়েও পাওয়া সার্টিফিকেটটি সুরক্ষা ওয়েবসাইটে রয়েছে জানালে তিনি বলেন, শিগগিরই ব্যবস্থা নেবো।
Discussion about this post