হার্টবিট ডেস্ক
নাগরিক জীবনে প্রতিদিনের ব্যস্ততায় কাজ করতে করতে অনেকেই হাঁপিয়ে উঠেন। টানা কাজে ক্লান্তিও বোধ করেন। সেজন্য অবশ্য কেউ কেউ চা বা কফিতেও চুুমক দেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করতে পারেন না। এর থেকে পরিত্রান দিতে পারে ন্যাপ কিংবা আরও সহজ করে বললে কাজের ফাঁকে অল্প করে ঘুমিয়ে নেওয়া।
পাওয়ার ন্যাপের আছে অসাধারণ ক্ষমতা। দিনের বেলায় এক পশলা বৃষ্টির মতো অল্পসময়ের নিদ্রা আপনাকে করে তুলতে পারে নতুন করে উদ্যমী। ফিরে পেতে পারেন আপনার কর্মষ্পৃহা ও উৎসাহ। ন্যাপ আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে রিস্টার্ট করে আপনাকে দেবে কাজের অভাবনীয় শক্তি। তবে একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো, ন্যাপ কিন্তু দুই বা তিন ঘণ্টার নাক ডাকা ঘুম নয়। এমনকি এক ঘণ্টাও নয়। একটি ন্যাপের দৈর্ঘ্য হয়ে পারে ২০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ৫০ মিনিট।
ন্যাপিং বা দুপুরের হালকা ঘুম হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের পক্ষে এটি উপকারী। এটি হরমোনের ভারসাম্য উন্নত করে এবং ডায়াবেটিস, পিসিওডি ও থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, অনিদ্রা নিরাময় করে, অসুস্থতা থেকে দ্রুত স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে, এমনকি এটি চর্বি হ্রাস করতেও সহায়ক। এসব স্বাস্থ্য উপকারিতার পাশপাশি আরও কী কী উপকার হয় জেনে নেওয়া যাক।
প্রডাক্টিভিটি বৃদ্ধি: কাজের মাঝে ৩০ মিনিটের ছোট্ট ঘুম নিঃসন্দেহে আপনার উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দেবে। পাশপাশি সচেতনতা বাড়াবে এবং যে কোনো কাজ দ্রুত শেষ করার প্রবণতা বৃদ্ধি করবে। ন্যাপ মস্তিষ্কের জন্যও অনেক ভালো। এ সময়টাতে মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায় এবং পরবর্তী কাজে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে।
শেখার ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের বেলায় অল্প করে ঘুমালে বা ন্যাপ মানুষের শেখার ক্যাপাসিটি ও স্মৃতিশক্তি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। যেকোনো সৃজনশীল কাজের আগে পাওয়ার ন্যাপ দারুণ কাজ দেয়।
হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে: বেশ কতগুলো গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দিনের বেলার স্বল্প এ ঘুম বা ন্যাপ মানুষের হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা উন্নতি করে। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তারা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন ন্যাপের মাধ্যমে। অনুরূপভাবে আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, বিকেল বেলার একটি ন্যাপ রক্তচাপ কমায়।
সেল ক্ষয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে: ঘুম বা ন্যাপ লিভার এবং ফুসফুসের সেল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে।
টেস্টোস্টেরন বাড়ায়: নিদ্রাহীনতা টেস্টোস্টেরন ও হরমোনের বৃদ্ধি দমিয়ে রাখে। তাই, ন্যাপের মাধ্যমে এর মাত্রা বাড়ানো সম্ভব।
স্ট্রেস লেভেল কমায় ও ইমিউন সিস্টেম সচল রাখে: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ন্যাপিং শরীরে স্ট্রেস উৎপাদকও কমিয়ে রাখে। শুধু তাই নয়, ন্যাপ ইমিউন সিস্টেমকে বোস্ট আপ করে। রাতের নিদ্রাহীনতার বিপরীতে দিনের অল্প নিদ্রা বা ন্যাপ ইতিবাচক ফল দেয়।
মুড ভালো করে: যারা ন্যাপ নেয়, তারা সবাই ন্যাপিং পছন্দ করে এবং সতেজ বোধ করে। এই ‘ফিল গুড বা সতেজ অনুভব’ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং মানুষকে কাজে মোটিভেটেড রাখে।
কর্মক্ষেত্রে সফলতা এনে দেয়: সকাল থেকে কর্মক্ষেত্রে টানা কাজে অনেকেই কাজের স্পৃহা হারিয়ে ফেলেন। তাই দুপুরে লাঞ্চের পর, বিশেষ করে ২টা থেকে ৩টার মধ্যে কিছুক্ষণ ন্যাপ নিলে কাজের স্পৃহা ফিরে পাওয়া যায়। এতে বেশি বেশি কাজ করা সহজ হয়। এবং এর প্রভাবে কর্মক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া যায়। পদোন্নতিও হয়। আর অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে প্রায়ই মেজাজ হারাতে পারেন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অধৈর্য, বিরক্তিকর ও বৈরী স্বভাব মুক্তি এনে দিতে পারে ন্যাপিং। হয়ে উঠবেন ক্যারিশমাটিক, ধীরে ধীরে পরিণত হবেন কর্পোরেট লিডারে।
ভ্রমণে আগে ন্যাপ: টানা ভ্রমণে ক্লান্তি চলে আসে। দরকার হলে ভ্রমণ শুরুর আগে কিছুটা সময় ন্যাপ নিতে পারেন। এর ফলে শক্তি সঞ্চয় করতে পারবেন এবং নতুন উদ্যমে ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।
পরীক্ষার আগে ন্যাপ ভালো ফলাফলে সহায়ক: সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণার তথ্যমতে পরীক্ষার আগ মুহূর্তে অতিরিক্ত পড়ার চাইতে সামান্য একটু ঘুম বা ন্যাপিং মস্তিষ্কের স্মরণশক্তির জন্য অধিকতর উপকারী হতে পারে। এর অন্যতম কারণ ঘুম আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে মুখস্থ করা একটি অকার্যকর পদ্ধতি।
ন্যাপিংয়ের সঠিক নিয়ম: ঠিক দুপুরের খাবারের পর ন্যাপ নিতে হবে। বাম দিকে কাত হওয়া অবস্থাতে ন্যাপ নিতে পারনে। ১০ থেকে ৩০ মিনিট ঘুমানো যেতে পারে। তবে খুব অল্প বয়স্ক, খুব বৃদ্ধ, খুব অসুস্থের জন্য সেটা ৬০ থেকে ৯০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। ন্যাপের আদর্শ সময় হলো বলো ২টা থেকে ৩টার মধ্যে।
তবে, আপনি যদি কর্মস্থলে থাকেন তাহলে আপনার পক্ষে দুপুরে বিছানায় শুয়ে থাকা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে, আপনি আপনার মাথাটি ডেস্কে রেখে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন। অথবা আপনি একটি ইজি চেয়ারে বসে থাকতে পারেন। যদি আপনি এটি না করতে পারেন তবে কোনো জানালার কাছে যান, অনেক দূরে তাকান এবং আপনার মনকে উন্মুক্ত করে দিন।
যা করা উচিত নয়: চেষ্টা করবেন সন্ধ্যার পর ন্যাপ না নিতে। দুপুরে খাওয়ার পর চা, কফি, সিগারেট বা চকোলেট খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। অতিরিক্ত স্মার্টফোনে ব্যস্ত হবেন না। কখনোই ৩০ মিনিটরে বেশি ন্যাপ না নেওয়া। এবং টিভি টিভি দেখতে দেখতে ঘুমাবেন না।
Discussion about this post