হার্টবিট ডেস্ক
রক্ত দিয়ে একজন মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব। এজন্য একে বলা হয় পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও নি:স্বার্থ উপহার।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সব মানুষই স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে পারবেন। তবে কিছু শর্ত রয়েছে। তাই রক্তদানের আগে নিয়ম কানুন জেনে নেওয়া জরুরি।
রক্তে থাকে রক্তকণিকা, প্লেটলেট ও প্লাজ়মা। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এক ইউনিট রক্ত থেকে এই তিনটি জিনিসই ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ বলা যায়, এক ইউনিট রক্ত কম করে তিনজন মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে।
কোনো রক্তদাতা চাইলে, সমগ্র রক্ত বা হোল ব্লাডও দিতে পারেন, অথবা রক্তের বিশেষ উপাদান যথা প্লেটলেটও দান করতে পারেন।
মানবদেহের মোট ওজনের শতকরা সাত ভাগ রক্ত থাকে। সাধারণত, একজনের দেহ থেকে একবারে এক ইউনিট রক্ত নেওয়া হয়। এই রক্ত দাতার দেহে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় তৈরি হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, এর ফলে দাতার কোনো ক্ষতিও হয় না।
তবে ইচ্ছা থাকলেও যে কেউ রক্ত দিতে পারবেন না। এছাড়া, রক্তের গ্রুপ যদি ভুল হয়, তবে গুরুতর শারীরিক সমস্যা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। রক্ত দেওয়ার বেশ কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
১. দাতার কোনো ছোঁয়াচে বা রক্ত দ্বারা বাহিত হতে পারে এমন অসুখ থাকলে, তিনি রক্ত দিতে পারবেন না।
২. এইডস, হার্টের রোগ, হাইপারটেনশন, ক্যানসার, এপিলেপ্সি, কিডনির অসুখ ও ডায়াবিটিস থাকলে রক্ত দেওয়া নিষেধ। যাদের অ্যানিমিয়া রয়েছে, রক্ত দেওয়ায় নিষেধ রয়েছে তাদেরও। হিমোগ্লোবিন যদি ১২ দশমিক ৫-এর নীচে হয়, তাহলে রক্ত দেওয়া যাবে না। পালস রেট যদি ৫০-এর কম ও ১০০-এর বেশি হয়, তাহলেও রক্ত নেওয়া হয় না। এছাড়া, হাঁপানি, টিবি বা কোনো ধরনের অ্যালার্জি থাকলেও রক্ত নেওয়া হয় না।
৩. দাতার বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। কমপক্ষে ৫০ কেজি ওজন না হলে রক্ত দেওয়া বারণ। রক্ত দেওয়ার সময় দৈহিক তাপমাত্রা থাকতে হবে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রক্তচাপের সিস্টোলিক থাকতে হবে ১০০-১৮০, ডায়াস্টোলিক ৫০-১০০।
৪. রক্তদানের আগের ছ’মাসের মধ্যে যদি ট্যাটু বা পিয়ার্সিং করানো হয়, তাহলেও রক্ত দেওয়া যাবে না।
৫. রেবিজ়, হেপাটাইটিস বি টিকা নেওয়ার পর কম করে ছ’মাস পরে রক্তদান করা উচিত। তবে কোভিডের টিকা নেওয়ার দু’ থেকে তিন সপ্তাহ পর রক্ত দান করা যেতে পারে বলে কোনো কোনো ডাক্তারের মত।
৬. রক্তদান করার আগের ২৪ ঘণ্টায় মদ্যপান করা যাবে না।
৭. গর্ভবতী বা সদ্য মা হয়েছেন এমন নারী রক্তদান করতে পারেন না। এছাড়া, মিসক্যারেজ হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে রক্তদান নিষিদ্ধ।
৮. সাধারণত ৯০ দিন পর পর, অর্থাৎ তিন মাস পর পর রক্ত দেওয়া যাবে।
৯.সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরে ৪ থেকে ৬ লিটার পরিমাণ রক্ত থাকে। প্রতিবার ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত দেয়া যায়।
রক্ত দেয়ার পর কী হয়?
রক্ত দেয়ার পর কিছুটা মাথা ঘোরাতে পারে। এটা স্বাভাবিক।
তবে এ সময় হাঁটাহাঁটি না করে অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকগণ।
রক্তদাতা যদি ঘামতে থাকেন এবং অস্থিরতা হয়, তবে তাকে স্যালাইন খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
Discussion about this post