ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী, নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ, এফসিপিএস (ইএনটি)
মানবদেহে মুখের ভেতর লালা নিঃসরণকারী তিন ধরনের গ্রন্থি রয়েছে। লালাগ্রন্থিকে Salivary Gland বলে এবং লালাকে Saliva বলা হয়। লালাগ্রন্থি লালা নিঃসরণ করে খাবার হজমে সাহায্য করে; মুখের ভেতরের তাপমাত্রা বজায় রাখে এবং লালা মুখের ভেতরকে ভেজা রেখে কথা বলতে সাহায্য করে। লালাগ্রন্থিতে ইনফেকশন হলে গ্রন্থি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না; ফলে মুখের ভেতর জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে।
কানের নিচে ম্যান্ডিবল হাড়ের-চোয়ালের কোনায় গালের দু’পাশে প্যারোটিড গ্রন্থির অবস্থান। প্যারোটিড গ্রন্থির প্রদাহ বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে; তবে সবচেয়ে বেশি ঘটে ভাইরাসের কারণে। এটি যে কোনো বয়সে হতে পারে। মাম্পস ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত এই প্যারোটিড গ্রন্থির প্রদাহকে বলা হয় ‘মাম্পস’। গ্রামে-গঞ্জে শিশুর এই রোগকে বলা হয় গাল ফোলা রোগ। যদি টিকা না দেওয়া থাকে; আগে কখনও মাম্পস না হয়ে থাকে তাহলে প্রায় প্রত্যেক শিশুই মাম্পসে আক্রান্ত হতে পারে। একবার মাম্পস আক্রান্ত হলে বা টিকা দেওয়া থাকলে সারাজীবনের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মে।
কীভাবে ছড়ায়
মাম্পস ভাইরাস সাধারণত শ্বাসনালি পথে আক্রমণ করে। মাম্পসের লক্ষণ প্রকাশের দু’দিন আগে থেকে এবং প্রকাশের পর পাঁচ দিন পর্যন্ত মাম্পস ছড়াতে থাকে। এ জন্য মাম্পস প্রকাশের প্রথম পাঁচ দিন শিশুকে স্কুলে পাঠাতে নিষেধ করা হয়।
লক্ষণ দেখে মাম্পস রোগ কীভাবে বোঝা যাবে?
মাম্পস হলে গালের দু’পাশের প্যারোটিড গ্রন্থি ফুলে যায়, সঙ্গে থাকে প্রচণ্ড ব্যথা। তবে এক পাশেও একা ফুলতে পারে। কান ওপরে উঠে যায় সামান্য। শরীরে অনেক জ্বর থাকে। ঢোক গিলতে ব্যথা লাগে; আক্রান্তরা সহজে খেতে পারে না। কথা বলতে কষ্ট হয়। সাধারণত গ্রন্থির ফোলা কমতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। মাম্পস সাধারণত দেখেই বোঝা যায়। মাম্পসের চিকিৎসায় ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল বা অন্যান্য ব্যথানাশক এবং জটিলতাজনিত ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গরগরা-কুলকুচি করতে বলা হয়।
প্রচুর পরিমাণ পানি পানের উপদেশ দেওয়া হয়। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাদ্য দেওয়া উচিত। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করতে হবে; কারণ মুখের ভেতর পরিস্কার রাখতে হবে। মনে রাখবেন, কবিরাজের কাছ থেকে কোনো ধরনের ঝাড়ফুঁক বা অপচিকিৎসা করানো যাবে না।
সঠিক চিকিৎসা না হলে এ থেকে পরে জটিলতা হতে পারে। মাম্পসের জটিলতার (complications) মধ্যে অন্যতম হলো মস্তিস্কের প্রদাহ এবং অণ্ডকোষের প্রদাহ। উল্লেখ্য, টিকা শুরু হওয়ার আগে মস্তিস্কের প্রদাহের অন্যতম কারণ ছিল মাম্পস। বড় ছেলেদের ক্ষেত্রে মাম্পস থেকে হতে পারে অণ্ডকোষের প্রদাহ (Orchits)। সাধারণত এক পাশের অণ্ডকোষ আক্রান্ত হয়ে ফুলে ওঠে; লাল হয়ে যায়। অণ্ডকোষের প্রদাহ হলে অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধও যোগ করে দেওয়া হয়।
মাম্পসের আক্রমণ প্রতিরোধ করাই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চাকে সময়মতো এবং নিয়মমতো টিকা দিন। তাহলে সে মাম্পস থেকে মুক্ত থাকবে।
Discussion about this post