হার্টবিট ডেস্ক
আজ (২৯ অক্টোবর) শুক্রবার বিশ্ব স্ট্রোক দিবস । ‘না করলে সময় ক্ষেপণ, স্ট্রোক হলেও বাঁচবে জীবন’- শ্লোগানকে সামনে রেখে নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
স্ট্রোক সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস পালন করা হয়। ২০০৬ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএসও) দিবসটি পালন শুরু করে।
সচেতনতার ঘাটতি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য সেবনের প্রবণতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনসহ নানা কারণে বাংলাদেশে স্ট্রোকে মৃত্যু বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে এক বছরে স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। স্ট্রোকে দেশে ২০১৯ সালে মারা গেছেন ৪৫ হাজার ৫০২ জন। ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৮৫ হাজার ৩৬০ জনে দাঁড়ায়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালের নিউরোলজি বিশেষজ্ঞরা এক বছর ধরে ঝুঁকি বেশি দেশের আট জেলায় গবেষণা চালিয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালের পরিচালক নিউরোলজি বিশেষজ্ঞরা অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ, যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. বদরুল আলম এ গবেষণা পরিচালনা করেন।
ওই গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর চেয়ে পুরুষের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। তবে সর্বাধিক ঝুঁকিতে আছে মাদকাসক্তরা। স্ট্রোকের জন্য ৫০ ভাগ দায়ী উচ্চ রক্তচাপ। ৩৬ শতাংশের অনিয়মিত জীবনযাপন, ২৩ শতাংশের জাঙ্কফুডে আসক্তি এবং ১৭ শতাংশের মানসিক চাপের কারণে স্ট্রোক হয়। দেশের ময়মনসিংহ জেলায় স্ট্রোকের হার সবচেয়ে বেশি। আর স্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে কম রাজশাহীতে। দেশে হাজারে ১১ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। অথচ উন্নত বিশ্বে স্ট্রোকে আক্রান্ত হাজারে ২ থেকে ৩ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ স্ট্রোক। তাদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষ স্ট্রোকের শিকার হন। এর মধ্যে পাঁচ মিলিয়ন মারা যান এবং আরও পাঁচ মিলিয়ন স্থায়ীভাবে অক্ষম বা প্যারালাইসিসের সম্মুখীন হন। স্ট্রোকে আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই চলছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, হৃদযন্ত্র ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বেড়েছে করোনাকালে। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা সেন্ট লুইস হেলথ কেয়ার সিস্টেমের এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার প্রথম ১২ মাস পর্যন্ত হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং হৃদযন্ত্রের ছোট-বড় নানা সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন লোকজন।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছেন– এমন রোগীদের ৩৯ শতাংশই এই ঝুঁকিতে আছেন। অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সুস্থ হয়েছেন- এমন রোগীদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি সাধারণ মানুষের তুলনায় ৫ দশমিক ৮গুণ পর্যন্ত বেশি থাকে। গত বছর মহামারি শুরুর পরে থেকে এ পর্যন্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগেছেন ১ লাখ ৫১ হাজার ১৯৫ জন মানুষ।
স্ট্রোক একটি প্রাগৈতিহাসিক রোগ। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দ থেকে প্রাচীন মেসোপটেমীয় ও পারস্য সভ্যতায় স্ট্রোকের বর্ণনা পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা জানান, স্ট্রোক দুই ধরনের। এক, রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং দুই, রক্তনালী ফেটে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো শরীরের ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে চোখে কম দেখা, মাথা ঘোরানো, অচেতন হয়ে পড়া, শরীরের এক দিক অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
Discussion about this post