হার্টবিট ডেস্ক
আজ ২৫ অক্টোবর, বিশ্ব এমডিএস সচেতনতা দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি। এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে Learn Your Type অর্থাৎ আপনার ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন।
এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম একটি সচেতনতামূলক র্যালির উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে এমডিএস রোগ বিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনার এর আয়োজন করা হয়।
বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহের সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুজ্জামান খান। হেমাটোলজি বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. মারুফ রেজা কবির এবং ডা. স্বরূপ চন্দ্র পোদ্দার বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বক্তারা বলেন, Myelodysplastic Syndrome (MDS) রক্তের একটি রোগ যেখানে রক্তের উপাদানসমূহের মধ্যে এক বা একাধিক উপাদান কমে যায়। সময়ের সাথে এমডিএস থেকে রক্তের ক্যান্সার একিউট মায়লয়েড লিউকেমিয়াতে রূপান্তরিত হতে পারে।
বিএসএমএমইউর হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ জানান, এমডিএস রোগে জিনগত পরিবর্তনের কারণে রক্ত তৈরি প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন, হোয়াইট ব্লাড সেল এবং প্লেটলেট এগুলোর যেকোন একটি বা একাধিকের পরিমাণ কমে যায় এবং কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
বয়সের সাথে এ রোগের আধিক্য দেখা যায়। দেখা গেছে, ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের মধ্যে লাখে ৭৫ জন পর্যন্ত এ রোগে ভুগে থাকতে পারেন।
এ রোগে আক্রান্তদের রক্তস্বল্পতা থাকতে পারে, যার কারণে বারবার রক্ত পরিসঞ্চালন প্রয়োজন হতে পারে। হোয়াইট ব্লাড সেল কমে গেলে বা কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে বারবার ইনফেকশন হতে পারে। প্লেটলেট কমে গেলে বা কার্যক্ষমতা কমে গেলে রক্তপাত হতে পারে। সাধারণত সিবিসি পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের উপাদান কমে যাবার প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। পরবর্তীতে বোন ম্যারো পরীক্ষা এবং জেনেটিক টেস্টের মাধ্যমে রোগ নিশ্চিত করা যেতে পারে। জেনেটিক টেস্টে রোগের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেনেটিক টেস্টের মাধ্যমে রোগের ঝুঁকি নির্ণয়, বিশেষত লিউকেমিয়ায় পরিণত হবার ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা নির্ধারণ করা যায়।
কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের শতকরা দশ জনের এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এমডিএস রোগীদের শতকরা ২৫-৩০ জনের লিউকেমিয়াতে রূপান্তরের আশঙ্কা থাকে। প্রাথমিকভাবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রক্ত পরিসঞ্চালন ও অন্যান্য সহায়ক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঝুঁকি কম হলে অনেক ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র এ চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। ঝুঁকি ও জেনেটিক টেস্ট এর ফলের উপর নির্ভর করে ঔষধ ও কেমোথেরাপি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এলোজেনিক হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল বা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা যেতে পারে।
এমডিএস একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ এবং আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত বয়স্ক হয়ে থাকেন। তাই এ রোগের চিকিৎসায় রোগী ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের পাশাপাশি রোগীর পরিচর্যাকারীদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়ে থাকে। তাদের সচেতনতাও অতীব জরুরি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই রোগীরা সুন্দরভাবে সুচিকিৎসা পেতে পারেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন হেমাটোলজি বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. মিলি দে। প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম ইউনুস এবং অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ। ডীন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম এমডিএস রোগীদের রেজিস্ট্রি তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করেন। হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ মায়েলোডিস্পলাস্টিক সিন্ড্রোম চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষার সুবিধাদি সহজলভ্য হবে এবং এ রোগের বিশ্বমানের চিকিৎসা দেশেই নিশ্চিত হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Discussion about this post