হার্টবিট ডেস্ক
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনিয়মিত খাদ্যাভাসের জন্য আমরা নিজেরাই অজান্তে রোগ বাধাই। অস্বাস্থ্যকর খাবার, অনিয়মিত ঘুম ও শরীর চর্চার অভাবে আমরা অনেক সময় জটিল রোগের সম্মুখীন হই।
বর্তমান সময়ে আমাদেরে জীবনের সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিডনিতে পাথর হওয়া। চারপাশের কেউ না কেউ এই সমস্যায় ভুক্তভোগী। নারী পুরুষ সবাই এ সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।
কিডনিতে মিনারেল জমে ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের মতো পদার্থ তৈরি করে কিডনির ভেতরে। একে কিডনি পাথর বলা হয়। অর্থাৎ ক্যালসিয়াম ও অক্সালেটের ডিপোজিশন হলে এই রোগের উৎপত্তি হয়। কিডনিতে ক্ষতিগ্রস্ত করে এই পাথর। আবার অনেক সময় রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই পাথর ।
কিডনিতে পাথর হলে যেসব লক্ষণ দেখা যায়:
কিডনিতে পাথর হলে প্রস্রাবেও এর প্রভাব পড়ে। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রস্রাবের রঙ গাঢ় বা হালকা হওয়া। প্রস্রাবে বেশি ফেনা বা বুদবুদ দেখা দেওয়া। অনেক সময় প্রস্রাব করতে ব্যথা অনুভব হয়।
কিডনির আরেকটি কাজ হলো শরীর থেকে বাড়তি তরল বের করে দেওয়া। কিডনিতে সমস্যা হলে এই বাড়তি তরল বের হতে সমস্যা হয়। বাড়তি তরল শরীরে ক্রমাগত জমার ফলে গোড়ালি, পা, পায়ের পাতা, মুখ, এবং হাতে ফোলাভাব তৈরি করে।
অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভব হওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়া কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে রক্তে দূষিত এবং বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন হয়। যার কারণে আপনি ক্লান্ত, দুর্বল অনুভব করেন। এমনকি কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। এই সময় রক্ত স্বল্পতা দেখা দিয়ে থাকে। দুর্বলতা অনুভব করা আরও একটি কারণ ।
বিভিন্ন কারণে খাবারে অরুচি হতে পারে। কিন্তু ঘন ঘন খাবারে অরুচি হওয়া, বমি বমি ভাব লাগলে অবহেলা করবেন না। শরীরে বিষাক্ত পদার্থ উৎপাদন হওয়ার কারণে এই ধরণের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
রক্তে মিনারেল এবং পুষ্টি উপাদান ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে ত্বকে র্যাশ এবং চুলকানি দেখা দিয়ে থাকে। মূলত কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে মিনারেল এবং পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়ে থাকে।
চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া যখন কিডনি থেকে বেশি পরিমাণে প্রোটিন প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়, তখন চোখের চারপাশ ফুলে যায়।
অনেকক্ষেত্রে তলপেটের নিচে এবং কুঁচকিতে ব্যথা হওয়া।
তবে একটু নিয়ম মাফিক জীবন যাপন করলে এসব রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। কিছু ঘরোয়া উপায়ে এই রোগের প্রতিকারের চেষ্টা করা যেতে পারে।
জেনে নিই ঘরোয়া কি কি উপায় অবলম্বন করলে কিডনির পাথর দূর করা যেতে পারে:
প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করতে হবে। যদি পাথর প্রথমিক অবস্থায় দেখে যায় তাহলে পরিমাণমতো পানি পানের মাধ্যমে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
অ্যাসিটিক অ্যাসিড কিডনির পাথরকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে। তুলসীর পাতায় থাকে এই অ্যাসিড ।তাই প্রতিদিন অন্তত দুবার করে তুলসীর রস খান। আর তুলসীর পাতা দিয়ে চা করেও পান করতে পারেন।
রোজ সকালে পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশ্রিত করে পান করুন। যদি খালি পেটে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় তাহলে সকালে নাস্তার পর অথবা দিনের যেকোনো সময়ে লেবুর রস পান করুন।
কিডিনি ভালো রাখতে ডালিমের অবধান অপরিসীম। ডালিমের রসে থাকে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট । যা কিডনিকে সুস্থ রাখতে এবং পাথর ও অন্যান্য টক্সিনকে দূর করতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দিনে কতবার ডালিমের রস পান করবেন তা ঠিক করুন।
আরও পড়ুন: পুরুষের ফিটনেস বাড়ে যেসব খাবারে
আপেল সিডার ভিনিগারের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে পান করুন। তবে একদিনে ১৬ চামচের বেশি খাবেন না। এই ভিনেগারের অ্যাসিটিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর দূর করে এবং ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।
এক কাপ ফোটানো গরম পানিতে ১ থেকে ২ চা চামচ শুকনো মেথি বীজ দিন ভিজিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে পান করুন। এটি প্রতিদিন পান করুন। মেথি কিডনিতে জমাকৃত পাথর হ্রাস করে ও কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে।
পরিমান মত গরম পানিতে হাফ চা চামচ শুকনো কালিজিরা ভিজিয়ে রাখুন।এর পর কালিজিরা মিশ্রিত পানি পান করুন।এটি দিনে দু’বার পান করুন। একটি গবেষণা অনুযায়ী, কালিজিরার বীজ কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন গঠনে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধা দেয়।
নিজে নিজে কোনো ওষুধ খাবেন না। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ, হারবাল পণ্য, ভেষজ উপাদান কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। উক্ত পরামর্শ অনু্যায়ী উপাদানগুলো ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়মিত কিডনির পরীক্ষা করুন, বিশেষ করে যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন।
Discussion about this post