হার্টবিট ডেস্ক
প্রাচীন ভারতে আয়ুর্বেদ ও ইউনানি শাস্ত্রের প্রভাব এবং বিস্তার সর্বজনবিদিত। দুটি চিকিৎসাচর্চাই ছিল প্রাকৃতিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে। মানুষের ইতিহাসের সেই আদিপর্ব থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানও ছিল প্রকৃতিনির্ভর। গাছপালা থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক নানা উপাদান থেকেই প্রস্তুত করা হতো বিভিন্ন রোগের ওষুধপত্র।
কালের আবর্তে চিকিৎসা শাস্ত্রেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। আয়ুর্বেদ, ইউনানি কিংবা হোমিওপ্যাথি ছাপিয়ে আধুনিক মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে অ্যালোপ্যাথিতে। ব্যয়বহুল এ চিকিৎসায় দ্রুত রোগমুক্তি হলেও রোগীদের অনেক সময়ই জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিচ্ছে। বিশ্বে অ্যালোপ্যাথির রমরমা বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে না হলেও জনপ্রিয়তা বাড়ছে হারবাল তথা বিকল্প চিকিৎসার। বিশেষত বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানসহ উন্নত বিশ্বেও এর ছোঁয়া লেগেছে। তবে অ্যালোপ্যাথির যুগে বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থার সম্প্রসারণে রয়েছে নানামাত্রিক প্রতিকূলকতা ও প্রতিবন্ধকতা।
প্রতিবছর ৭০০ থেকে ৮০০ ছাত্র-ছাত্রী ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট পেয়ে বের হয়। ডিপ্লোমা শেষ করে হাকিম ডিগ্রি অর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর নিজেরা দাওয়াখানা দিয়ে মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তবে তারা নিজস্ব ওষুধ উৎপাদন করতে পারবেন না।
বাংলাদেশে ইউনানি ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসার একমাত্র সরকারি গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এটি পরিচালিত হয় মেডিকেল এডুকেশন বাংলাদেশের আওতায়। অন্যদিকে ইউনানি ও আয়ুর্বেদ বোর্ডের আওতায় অনুমোদিত আরও ২৬টি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে একটি সরকারি কলেজ আর বাকি ২৫টি বেসরকারি।
বোর্ডের অধীনে ২৬টি মেডিকেল কলেজ থাকলেও ইন্টার্নশিপ সুবিধা দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। চার বছর পড়াশোনা শেষে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ করার কথা থাকলেও কলেজগুলোতে হাসপাতাল না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রফেশনাল ট্রেইনিং পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থী ব্যবহারিক চর্চা ছাড়াই সনদ পাচ্ছেন। এছাড়া নামে-বেনামে অনিবন্ধিত অনেক ইউনানি ও আয়ুর্বেদ মেডিকেল কলেজও গড়ে উঠেছে।
ইন্টার্নশিপের বিষয়ে ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জাগো নিউজকে জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ করানোর কথা রয়েছে। কিন্তু তারা কোথায় ইন্টার্নশিপ করবেন জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, কিছু ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে বোর্ডের পক্ষ থেকে হাসপাতাল করার অনুমোদন দেওয়া থাকলেও কোনো কলেজেই এখনও হাসপাতাল গড়ে উঠতে দেখা যায়নি। এছাড়াও প্রতিটি কলেজে দশ শয্যার বহির্বিভাগ চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও সেটিও কাগজে-কলমেই আটকে আছে।
সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে যারা চিকিৎসক হিসেবে সনদ নিয়ে বের হন, তাদের নামের আগে ডাক্তার না লিখতে সম্প্রতি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। যদিও এটা নিয়ে এরইমধ্যে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে ইউনানি বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে কলেজগুলোতে হাসপাতাল চালু না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাদের উত্তর, কোন কোন প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল চালু করেছে বা করেনি, সেটি তারা সরেজমিনে এখনও দেখেননি। তবে তাদের দিক থেকে হাসপাতাল চালু করার অনুমোদন আরও আগেই দেওয়া আছে।
হাসপাতাল চালু না করার ব্যাখ্যা হিসেবে বোর্ড কর্তারা জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে যারা চিকিৎসক হিসেবে সনদ নিয়ে বের হন, তাদের নামের আগে ডাক্তার না লিখতে সম্প্রতি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। যদিও এটা নিয়ে এরইমধ্যে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা। সেখানকার পড়াশোনা মেডিকেল বোর্ড থেকে পরিচালিত হলেও হাসপাতালে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা নিতে যান না।
তাদের বক্তব্য, অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণদের চার বছর পড়াশোনার পর এ ক্যাটাগরিতে হাকিম হিসেবে চিকিৎসার অনুমোদন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও রোগীদের চিকিৎসা নিতে আসায় আগ্রহ কম। রোগীর অভাবেই কলেজগুলো হাসপাতাল চালু করার ব্যাপারে তৎপর হচ্ছে না।
জানা গেছে, ইউনানি বোর্ড থেকে প্রতিবছর ৭০০ থেকে ৮০০ ছাত্র-ছাত্রী ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট পেয়ে বের হয়। ডিপ্লোমা শেষ করে হাকিম ডিগ্রি অর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর নিজেরা দাওয়াখানা দিয়ে মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তবে তারা নিজস্ব ওষুধ উৎপাদন করতে পারবেন না।
ডিগ্রিধারী এসব শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ছাড়া কীভাবে সার্টিফিকেট দেওয়া হয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোর্ড কর্তারা আরও জানান, কলেজগুলোতে দশ শয্যার বহির্বিভাগ চিকিৎসাব্যবস্থা থাকে। সেখানে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ছয় মাসের কোর্স করেন। আর কিছু সংখ্যক তাদের শিক্ষকদের অধীনে কাজ করেন।
তবে কর্মকর্তাদের এ বক্তব্য আর বাস্তবতায় বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, ডিজি হেলথ কর্তৃক কোনো ইউনানি ও আয়ুর্বেদ কলেজকে বহির্বিভাগ বা হাসপাতাল করার অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
এছাড়া নামে-বেনামে গড়ে ওঠা ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজগুলোর ব্যাপারে বোর্ডের কী পরিকল্পনা, জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইউনানি ও আয়ুর্বেদ বোর্ডের সহকারী পরিচালক ড. সর্দার মো. রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বোর্ড থেকে ২৬টি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কোনো কলেজকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আমরা অনুমোদনহীন যেকোনো কলেজ বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এটা অব্যাহত থাকবে।
সাধারণ ইউনানি চিকিৎসক যেমন ভ্যানগাড়ি করে গাছের ছালবাকল নিয়ে বসে তাদের জন্য ইউনানি কলেজগুলো ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রশিক্ষণ দিতো ইউনানি বোর্ড। পরবর্তীতে ২০১২ সাল থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোর্ডের সহকারী পরিচালক জানান, আমরা তাদের ট্রেইনিং দিতাম- যাতে তারা অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে না যায়। ট্রেইনিং দিয়ে তাদের একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা হয়, যাতে তারা সমস্যা সৃষ্টি করতে না করতে পারে।
Discussion about this post