হার্টবিট ডেস্ক
এখন চলছে শরৎকাল। ক’দিন পরই আসছে হেমন্ত। শীত আসতে এখনো ঢের দেরি। তবে এর মাঝেই শীতের আবহ জানান দিতে চায় ঋতু পরিবর্তনের কথাটি। ঠান্ডা-গরমের মিশ্র আবহাওয়ার এই সময়ে শিশুদের মাঝে দেখা দিয়েছে উচ্চমাত্রায় জ্বর (হাই ফেভার), ব্রঙ্কিউলাইটিস (শ্বাসকষ্ট) ও ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। এছাড়া নিউমোনিয়া তো আছেই।
এসব রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। শিশু রোগীতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ঠাঁই নেই অবস্থা। শয্যা সংকটে এক শয্যায় তিন থেকে চার শিশুকে রেখেও চিকিৎসা দিতে হচ্ছে এখানে।
শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে সব মিলিয়ে শয্যা সংখ্যা একশোর কিছু বেশি। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে বিভাগে ভর্তি শিশু রোগীর সংখ্যা পাঁচশোর কম নয়। হিসেবে শয্যার তুলনায় প্রায় তিন থেকে চার গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকছে এই বিভাগে।
ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা বলছেন, পুরো হাসপাতালে দৈনিক আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকে। এর মধ্যে কেবল শিশু স্বাস্থ্য বিভাগেই ভর্তি রোগীর সংখ্যা পাঁচশোর কিছু কম-বেশি। হিসেবে হাসপাতালের মোট রোগীর এক-পঞ্চমাংশই ভর্তি থাকছে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে। যদিও হাসপাতালে মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৪০টির কম নয়। দিন দিন রোগীর চাপ বাড়ায় শয্যা সংকট প্রকট হয়েছে শিশু বিভাগে।
শয্যা সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে এক শয্যায় তিন থেকে চার শিশুকে রেখে চিকিৎসা দিতে হয় জানিয়ে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ আজাদীকে বলেন, গরিব পরিবারের শিশু রোগীদের চিকিৎসায় এই হাসপাতালই একমাত্র ভরসা। বৃহত্তর চট্টগ্রামের দূর-দূরান্ত থেকে শিশু রোগীদের এখানে নিয়ে আসা হয়। যার কারণে এখানে সবসময় রোগীর চাপ থাকে। চাপ সামাল দিতে বিভাগের শয্যা সংখ্যা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া, সবকয়টি রোগই ভাইরাসজনিত। তবে নিউমোনিয়ার প্রকোপ শিশুদের মাঝে সারা বছর কম-বেশি দেখা গেলেও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ তেমন থাকে না। কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের সময় আরএসবি (রেসপিরেটরি সিনসেটিয়াল ভাইরাস) ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত এই রোগটির প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যায়। আর গরম-ঠান্ডায় যোগ হয়েছে ভাইরাল ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ।
এ সময়ে উচ্চ মাত্রায় জ্বরে আক্রান্ত শিশু বেশি আসছে জানিয়ে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সনত কুমার বড়ুয়া বলেন, জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা পাওয়া যাচ্ছে। এই জ্বর ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত ভোগাচ্ছে। একই সাথে শিশুর শ্বাসকষ্টের জটিলতাও দেখা যাচ্ছে। ভাইরালজনিত এসব রোগে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। তবে এ নিয়ে অভিভাবকদের সজাগ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে অন্য সময় দৈনিক ৪ থেকে ৫ জন শিশু শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হতো। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০ থেকে ১৫ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে। এর মাঝে জ্বরে আক্রান্ত শিশুও রয়েছে। এছাড়া ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ওয়ার্ডে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ শিশু রোগী ভর্তি হলেও এখন এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ জনে।
সরেজমিনে ওয়ার্ডটিতে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডের তিনটি সাধারণ ইউনিটে মোট ৭০ শয্যার বিপরীতে আড়াই শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছে। বিশেষ চারটি ইউনিটসহ বিভাগের মোট ১৩২ শয্যার বিপরীতে গত কয়েকদিন ধরে পাঁচশোর কম-বেশি শিশুরোগী চিকিৎসাধীন বলে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। ভর্তিকৃত শিশুরোগীদের মাঝে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি বলে জানান ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা।
ঠান্ডাজনিত রোগের প্রায় সবকয়টি রোগই ভাইরাসজনিত কারণে হয়ে থাকে জানিয়ে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সনত কুমার বড়ুয়া বলেন, ঋতু পরিবর্তন, ঘর স্যাঁতস্যাঁতে-অপরিষ্কার থাকা, ঠান্ডা-গরমের মিশ্র আবহাওয়া ও ঠান্ডাজনিত কারণে শিশুদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া আক্রান্ত শিশুর হাঁচি থেকেও ব্রঙ্কিউলাইটিস রোগটি সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। মূলত এসব কারণেই আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।
এ রোগের লক্ষণ হিসেবে হঠাৎ কাশি বেড়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া ও জ্বরের সাথে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে ঘর ও শিশুকে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, শিশুর নাক পরিষ্কার রাখা এবং শিশুর শরীরে ঠান্ডা লাগতে না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
Discussion about this post