হার্টবিট ডেস্ক
বয়স ২২ বছর অথচ অভিজ্ঞতা ৫০ বছরের। ঢাকা কলেজের দর্শনের ছাত্র আব্দুল মালেক ভূঁইয়া রীতিমতো বনে গেছেন ডাক্তার। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। মালেকের মতো আরও কিছু ভূয়া ডাক্তার বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানের মাধ্যমে। ডাক্তার না হয়েও সবার চোখের সামনেই চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন ভূয়া ডাক্তাররা।
পাইলসের সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন এ ব্যক্তি। সাত হাজার টাকা দিয়ে চিকিৎসা শুরু। অপারেশনের পর ক্যান্সারে আক্রান্ত।
ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান বলেন, ৫টি ইঞ্জেকশন দেয়ার পরে দেখি আগের চেয়ে বেশি সমস্যা। এরপর হাসপাতালে গেলাম সেখানে বায়োপসি করালাম। ওই টেস্টে ক্যান্সার ধরা পড়লো।
ভুক্তভোগী এ ব্যক্তির কাছেই পাওয়া গেলো এই ডাক্তারের কার্ড। সাতদিনে ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় রোগী দেখেন।
অবশেষে খোঁজ মিললো ডাক্তার আব্দুল মালেক ভূঁইয়ার। রীতিমতো অপারেশনে ব্যস্ত তিনি। ক্যামেরার সামনে নিজেই স্বীকার করলেন সবকিছু।
ভূয়া ডাক্তার আব্দুল মালেক ভূঁইয়া বলেন, যেহেতু আব্বার কাছ থেকে শেখেছি, অবৈধ হলেও এটি তো কবিরাজি চিকিৎসা। অনার্সে লেখাপড়া করছি, ডিপ্লোমাতে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে গত দেড় বছর ধরে ভর্তি হতে পারছি না।
এই মালেকের মতো আরও একজন মা ও শিশু বিশেষজ্ঞের খোঁজ মিললো। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ে ডাক্তার বনে গেছেন মমিনুল। তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগই এনেছেন এক ভুক্তভোগী। সামান্য অসুস্থ হলে স্ত্রীকে নিয়ে যান ডাক্তারের চেম্বারে। ব্যবস্থাপত্রে লেখা ওষুধ খেয়েই সকালে মারা যান তার স্ত্রী।
ভুক্তভোগী মো. মনির হোসেন বলেন, অবশ্যই বিচার চাই। শুধু আমার স্ত্রী নয় তিনদিন পর তারই চিকিৎসায় আরেকজন মারা গেছেন। মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি থানা।
মনির হোসেন বলেন, আমি মতিঝিল থানায় গেলাম, ডিউটি অফিসার আমার জিডি পর্যন্ত রাখেনি। দুর্ব্যবহার করে আমাকে বের করে দিয়েছে, সেই সঙ্গে হুমকি-ধামকিও দিয়েছে তারা।
ফকিরাপুলের চেম্বারে পাওয়া গেলো ডাক্তার মোহাম্মদ মমিনুল ইসলামকে। কোনো প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারলেন না তিনি।
ভুয়া ডাক্তার মমিনুল ইসলাম বলেন, মিরপুরের শিশু হাসপাতালে আমরা তিন মাসের ট্রেনিং করেছি।
আরেক ভূয়া ডাক্তারের খোঁজ মিললো এই ফকিরাপুলেই। তিনি মোহাম্মদ আল মামুন। বাবা ছিলেন হাতুরে ডাক্তার। তাই উত্তরাধিকারসূত্রে তিনিও ডাক্তার।
বিএমএ মহাসচিব জানালেন, এরকম প্রতারণার বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক নজরদারি প্রয়োজন।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি এম ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘যে লোকটা বছরের পর বছর হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু করে দিচ্ছে, মৃত্যুর কারণ হচ্ছে- সেই সমস্ত মানুষকে কেন আমরা লঘু দণ্ড দিয়ে তাদেরকে আবার কাজ করার সুযোগ দিব বা উৎসাহিত করবো। আমি মনে করি, এই জায়গাটায় সরকারের খুব ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিত।’
Discussion about this post