হার্টবিট ডেস্ক
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এবার আলাদাভাবে স্থায়ী আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপন হচ্ছে। ৫০ শয্যার এ ওয়ার্ডে থাকছে দশ শয্যার আইসিইউ সুবিধাও। নতুন এ ওয়ার্ড স্থাপনে এরই মধ্যে সাড়ে তিন কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, হাসপাতালে আলাদাভাবে স্থায়ী আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপনে নির্দেশনার পাশাপাশি মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দও দেয়া হয়েছে। কাজটি বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত বিভাগ। যেহেতু অর্থ বরাদ্দও হয়ে গেছে, তাই খুব সহসা ওয়ার্ড স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
চমেক হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাড়ে তিন কোটি টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থান নির্ধারণ করে দিলে আমরা এর কাজ শুরু করতে পারবো।
হাসপাতালের পুরনো ভবনের দোতলায় বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্লকের স্থলে নতুন আইসোলেশন ওয়ার্ডটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, দোতলায় বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্লকটি আমরা নতুন ভবনে সরিয়ে নিচ্ছি। প্রশাসনিক ব্লক নতুন ভবনে স্থানান্তর হলে দোতলার ওই অংশটি খালি হবে। ওখানেই আমরা নতুন আইসোলেশন ওয়ার্ডটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রশাসনিক ব্লকটি স্থানান্তরের পরপরই গণপূর্ত বিভাগকে জায়গাটি নির্ধারণ করে দেয়া হবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান পুরনো ভবনের দোতলা থেকে প্রশাসনিক ব্লকটি নতুন দশতলা (এনসিলারি) ভবনের আটতলায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে নতুন ভবনের আটতলার ফ্লোরটি প্রশাসনিক ব্লক হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষসহ পুরোপুরি প্রস্তুত করে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি কক্ষ। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই প্রশাসনিক ব্লকটি নতুন ভবনে স্থানান্তরের কথা জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের (২০২০ সালে) প্রথম দিকে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে হাসপাতালগুলোতে সাময়িকভাবে করোনা ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়। মূলত অন্য এক বা একাধিক ওয়ার্ডের কার্যক্রম সংকুচিত করে সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা শুরু করা হয়। সাময়িকভাবে এই করোনা ওয়ার্ড করতে গিয়ে কোনো কোনো হাসপাতালে বেশ কয়টি ওয়ার্ড সরিয়ে নিতে হয়েছে। আবার কোনো কোনো হাসপাতালে অন্য সব রোগের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এতে করে অন্য রোগের চিকিৎসা সেবায় কিছুটা হলেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা।
এর প্রেক্ষিতে বিশেষ করে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে আলাদা করে স্থায়ী আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপনের নির্দেশনা দেয়া হয়। এমন নির্দেশনা পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, দেশ থেকে খুব তাড়াতাড়ি যে করোনা নির্মূল হবে, সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। আমাদের হয়তো এই করোনা নিয়েই চলতে হবে। করোনার মতো অন্য কোনো সংক্রামক রোগেরও প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সেটি হলেও রোগীদের আইসোলেশনে বা আলাদা রাখতে হবে। ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্তদেরও আলাদাভাবে রাখতে হতে পারে। সব দিক বিবেচনায় হাসপাতালে আলাদাভাবে স্থায়ী আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপনে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে নতুন এ ওয়ার্ড স্থাপনে অর্থ বরাদ্দও দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, চমেক হাসপাতালের নিচতলায় জরুরি বিভাগের পার্শ্ববর্তী তিনটি ওয়ার্ড (ক্যাজুয়াল্টি, ফিজিক্যাল মেডিসিন এবং চর্ম ও যৌন রোগ) অন্যত্র সরিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা করোনা ব্লক গড়ে তোলা হয়। হাসপাতালের মূল প্রবেশ পথে (নিচতলার ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান থেকে জরুরি বিভাগ পর্যন্ত) বাম পাশের পুরো ব্লকটিতে প্রাথমিকভাবে একশ শয্যায় এই করোনা চিকিৎসা শুরু করা হয়।
পরবর্তীতে হাসপাতালের চারতলায় আরো একটি (নাক-কান-গলা) ওয়ার্ডের কার্যক্রম সংকুচিত করে সেখানেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। সবমিলিয়ে তিন শতাধিক শয্যায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে এসেছে চমেক হাসপাতাল। যদিও করোনা সংক্রমণ ও রোগী কমে আসায় চারতলার ইয়েলো জোনটি গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। নতুন আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপনের কাজ শেষ হলে স্থায়ীভাবে সেটিতেই করোনাসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়া হতে পারে।
Discussion about this post