হার্টবিট ডেস্ক
অনেকেই মনে করেন ঘি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। আবার অনেকের ধারণা এতে দূর হয়ে যায় একাধিক রোগ। আসলে ঘি অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি খাবার।
ভিটামিন এ, ই, কে ২, ডি, ক্যালসিয়াম, সিএলএ এবং ওমেগা ৩ এর মতো খনিজে পরিপূর্ণ। ঘি এরমধ্যে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা সামগ্রিকভাবে শরীরকে উন্নত করতে সাহায্য করে। ঘি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
আবার রান্নায় স্বাদ বাড়াতে ঘিয়ের তুলনা নেই। অনেকেই আবার ওজন, ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল বাড়ার ভয়ে ঘি খান না। কিন্তু এর একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। এমনকি ওজন ও কোলেস্টেরল কম করতেও সাহায্য করে ঘি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘিয়ের সঙ্গে কয়েকটি খাবার মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। ঘি বুট্রিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। এটি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রোবায়োটিক খাদ্য হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যাকেও দূর করে। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে ঘি। তার সঙ্গে স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। ঘিয়ের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ব্রণর সমস্যা দূর করে। তার সঙ্গে ত্বকের কালো দাগ দূর করে।
কীভাবে খাবেন জেনে নিন-
হলুদ-ঘি ও তুলসি-ঘি : হলুদ, ঘি আর তুলিসর সমন্বয় অত্যন্ত পুষ্টিকর। এর ফলে শিগগিরই ওজন কমবে, রক্ত কোষ সৃষ্টি হবে, আবার হৃৎপিণ্ডও সুস্থ থাকবে। কিডনির কার্যকরিতা বৃদ্ধি করে ঘি মেশানো হলুদ। শরীরে ফোলাভাবের সমস্যা থাকলে, তার হাত থেকেও মুক্তি পাবেন এটি খেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হলুদ দেওয়া ঘি খেলে এটি শরীরের প্রায় সমস্ত ধরনের ব্যথা দূর করে। বাড়িতে ঘি তৈরির সময় তাতে তুলসি পাতা মিশিয়ে দিন। এর ফলে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেড়ে যাবে। আবার বাড়িতে ঘি তৈরির সময় একটি তীব্র গন্ধ উৎপন্ন হয়। ঘিয়ে তুলসি পাতা মিশিয়ে দিলে, সেই গন্ধও দূর হবে। তুলসি দেওয়া ঘি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এমনকি সর্দি-কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাও দূর করে। পাশাপাশি রক্তে শর্করার পরিমাণ কম করে তুলসি দেওয়া ঘি।
ঘি ও রসুন-ঘি : ঘিয়ে কর্পূর মিশিয়ে খেলেও বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। স্বাদে সামান্য তিক্ত হলেও, এর ফলে বাত, পিত্ত ও কফ-এই তিন ধরনের সমস্যা থেকেই মুক্তি পাওয়া যায়। কর্পূর মেশানো ঘি হজম শক্তিকে উন্নত করে। অন্ত্র সুস্থ রাখে, জ্বর কম করে এবং হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দে বজায় রাখে। অ্যাজমার সমস্যা থেকেও স্বস্তি দেয় ঘি মেশানো কর্পূর। গার্লিক বাটারের মতো, ঘিয়ে রসুন মিশিয়ে খেলেও স্বাদ বৃদ্ধি পায় এবং রসুনে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদান প্রদাহ কম করে। আবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে ঘি।
দারুচিনি ও ঘি : দারুচিনিতে উপস্থিত অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরকে নানা রোগ থেকে রক্ষা করে। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়্ন্ত্রণে রাখা, পেটে ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে এই মিশ্রণটি। কড়াইয়ে অল্প ঘি এবং ২ টা দারুচিনি মিশিয়ে মাঝারি তাপে ৪ থেকে ৫ মিনিট পর্যন্ত গরম করুন। তার পর ঠান্ডা হওয়ার জন্য ছেড়ে দিন। ঘি দারুচিনির স্বাদ টেনে নেবে এবং এটি খেলে শরীরে নানা উপকার হবে।
গোলমরিচ ও ঘি : কাশির সমস্যা থাকলে ঘিয়ে গোলমরিচ মিশিয়ে খেতে পারেন। এর ফলে সুফল পাবেন। এর জন্য ঘিয়ের মধ্যে সামান্য গোলমরিচ পাউডার মিশিয়ে অল্প আঁচে গরম করুন। তার পর চুলা বন্ধ করে এতে গুড়ো করা মিশ্রী মিশিয়ে খেয়ে নিন। দিনে ২-৩ বার খেলে কাশির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
দুধ ও ঘি : দুধে ঘি মিশিয়ে পান করার প্রচলন বহু পুরনো। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা অনুযায়ী, গাঁটে ব্যথা, পেট ব্যথার সমস্যা থাকলে দুধে ঘি মিশিয়ে পান করুন। আবার এর প্রভাবে পাচন প্রক্রিয়া উন্নত হয় ও বিপাক বৃদ্ধি পায়। ঘি-তে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্লান্তি দূর করে। আবার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও এই মিশ্রণ উপকারী। এর ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয় ও বলিরেখা দূর হয়। দাগছোপ দূর করতেও সহায়ক এ মিশ্রণ।
ঘি ও গুড় : এই মিশ্রণটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। হরমোন সংক্রান্ত নানা সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে করে ঘি ও গুড়। আবার ঘি ও গুড় এক সঙ্গে খেলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বাইরে বেরিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ত্বক, চুল ও নখকেও স্বাস্থ্যকর করে তোলে ঘি ও গুড়। পাশাপাশি গুড় অ্যানিমিয়ার সমস্যাও দূর করে। দুপুর কিংবা রাতের খাবারের পর এটি খেতে পারেন।
Discussion about this post