হার্টবিট ডেস্ক
রাজশাহীর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম এ খালেক বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি থেকে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে ।
তিনি বলেন, ঘুমের অপ্রতুলতাই মানুষের হৃদরোগ ডেকে আনে। কাজেই সুস্থ থাকতে হলে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মরা রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডুবে থাকে। বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপও বাড়ছে। ফলে এ থেকে হৃদরোগ এমনকি হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
ভারতীয় উপমহাদেশে হৃদরোগের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ইউরোপ-আমেরিকা ও পাশ্চাত্যে এখন ততটা ভয়াবহ নয় হৃদরোগ। কিন্তু এই উপমহাদেশে হৃদরোগ বেশি ভয়াবহ।
আর এর প্রধান কারণ খাদ্যাভাস। খাবারে কার্বোহাইড্রেডের আধিক্য থাকে। তাছাড়া চুর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড ও ভাজাপোড়া বেশি খায় লোকজন। এসব খাবারে ট্রান্সফ্যাট বেশি থাকে। যা রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তনালী বন্ধ করে দেয়। এতে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেড়ে যায়। টেনশনমুক্ত থাকলে, সবুজ শাকসবজি খেলে, ধুমপান পরিহার করলে এবং নিয়মিত হাঁটা-চলা ও ব্যায়াম করলে অনেকাংশে সুস্থ থাকা যায়।
তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। প্রতি চারজনের একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। অথচ এদের অর্ধেক লোকজন বিষয়টি জানেন না।
অনেকেই মনে করেন হৃদরোগ নিরাময়যোগ্য রোগ। ফলে কারও কারও ভেতর যথাযথ চিকিৎসা চালিয়ে যেতেও উদাসীনতা দেখা যায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক ছাড়াও ব্রেন স্ট্রোক, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এমনকি দৃষ্টিশক্তিও হারাতে পারে মানুষ।
ডা. এম এ খালেক বলেন, লোকজনের মাঝে ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমরা নিয়মিত সভা-সেমিনার করে লোকজনকে সচেতন করছি। উপজেলা পর্যায়ে হার্টক্যাম্প হচ্ছে। প্রচারপত্র বিলি করেও সচেতনতার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হৃদরোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। রাজশাহীতে প্রচুর হৃদরোগী রয়েছেন, যাদের একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত। রাজশাহীর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন মেডিকেল সেন্টার প্রতি চারজনের একজন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাদাৎ হোসেন রওশন বলেন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজশাহীতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ১৯৮৪ সাল থেকে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গড়ে প্রতি বছর অন্তত হাজার ছয়েক রোগী সেবা নিচ্ছেন তাদের কাছে। গত এক বছরে সেবা নিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার রোগী। নিজস্ব অবকাঠামো না থাকায় এতোদিন তারা কেবল আউটডোর সেবা দিয়ে এসেছেন। স্বল্পমূল্যে দিচ্ছেন প্যাথলজি সেবাসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ।
তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া ভালো হৃদরোগ চিকিৎসার সুযোগ নেই রাজশাহীতে। এ জন্য তারা ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ হৃদরোগ হাসপাতাল নির্মাণ করছেন। সেটির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেখানে সাধারণ শয্যার বাইরে অত্যাধুনিক সিসিইই ও আইসিইউ সুবিধা থাকবে। তবে থাকবে না সার্জারির বন্দোবস্ত। সক্ষমতা বাড়লে সেটিও করতে চান তারা।
Discussion about this post