হার্টবিট ডেস্ক
সম্প্রতি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পরেও শরীরে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষায় পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ওয়ান হেলথ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে।
ওই গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৬২.৩৩ শতাংশের দেহে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। অপরদিকে, উভয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণকারী জনগোষ্ঠীর ৯৯.১৩ শতাংশের মধ্যে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। আর যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি তাদের মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশের দেহে প্রাকৃতিকভাবে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি (ওমএ) পাওয়া গেছে।
সিভাসু’র উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে ওয়ান হেলথ ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. শারমিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. এমএ হাসান চৌধুরী এ গবেষণা পরিচালনা করেন। তাদের সঙ্গে সহকারী গবেষক ছিলেন– ডা. জাহান আরা, ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. তারেক উল কাদের, ডা. আনান দাশ, ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ডা. ইয়াসির হাসিব, ডা. তাজরিনা রহমান, ইন্টার্ন ডা. সীমান্ত দাশ।
এ সম্পর্কে ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর অ্যান্টিবডির ব্যাপকতা ও পরিমাণ নির্ণয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৪৬ জনের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, যারা করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন তাদের অ্যান্টিবডির ব্যাপকতা বেশি। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের শরীরে ছয় মাস পরেও অ্যান্টিবডি সক্রিয় পাওয়া গেছে।’
চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, রোগীর অ্যাটেনডেন্ট, আউটডোর ও ইনডোর রোগী (কোভিড-১৯ আক্রান্ত নন এমন), পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের সার্স-কোভ-২-এর উপসর্গযুক্ত, উপসর্গহীন, প্রথম ডোজ টিকাপ্রাপ্ত এবং উভয় ডোজ টিকাপ্রাপ্ত মোট ৭৪৬ জনের ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠী (২২৩ জন) কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনের শুধু প্রথম ডোজ নিয়েছেন। উভয় ডোজ নিয়েছেন প্রায় ৩১ শতাংশ (২৩১ জন) এবং ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি জনগোষ্ঠীর ৩৯.১৪ শতাংশ (২৯২ জন)।
গবেষণায় দেখা যায়, প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে ৬২.৩৩ শতাংশের দেহে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। অপরদিকে, উভয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের ৯৯.১৩ শতাংশের মধ্যে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। আর যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি তাদের মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশের দেহে প্রাকৃতিকভাবে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি (ওমএ) পাওয়া গেছে। এ ছাড়া যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি, তাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি (ওমএ) তৈরি হয়েছে (গড়ে ৫৩.৭১ ডিইউ/ মিলি), এর চেয়ে গড়ে প্রায় তিন গুণ বেশি অ্যান্টিবডি (১৫৯.০৮ ডিইউ/ মিলি) তৈরি হয়েছে যারা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন এবং প্রায় পাঁচ গুণ অ্যান্টিবডি টাইটার (২৫৫.৪৬ ডিইউ/ মিলি) পাওয়া গেছে যারা দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, প্রথম ডোজ গ্রহণের পর প্রথম মাসে গড়ে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি (ওমএ) টাইটার দেহে বিদ্যমান থাকে (১৭৫.১ ডিইউ/ মিলি) তার প্রায় ২৫ শতাংশ হ্রাস পায় দ্বিতীয় মাসে এসে। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর অ্যান্টিবডির পরিমাণ (গড়) সময়ের সঙ্গে হ্রাস পাওয়ার প্রবণতায় ভিন্নতা দেখা যায়।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়াদের ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করার দুই মাসের মধ্যে গড়ে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি টাইটার থাকে (৩২৪.৪২ ডিইউ/মিলি) চতুর্থ মাসে এসে তার প্রায় ২১ শতাংশ টাইটার হ্রাস পায়, কিন্তু ষষ্ঠ মাসে এসে তা চতুর্থ মাসের চেয়ে মাত্র ৩.৪ শতাংশ হ্রাস পায়।
Discussion about this post