হার্টবিট ডেস্ক
দেশে আগের তুলনায় ধীরে ধীরে কমে আসছে করোনা সংক্রমণের হার। সংবাদটি স্বস্তির হলেও উদ্বেগ কাটছে না নীতি নির্ধারকদের। কারণ, গণপরিবহন, দোকান-শপিংমল, বাজারসহ কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এভাবে চলতে থাকলে করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনও বিকল্প নেই বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় গঠিত করোনা বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সাবান পানি দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে বড় ধরনের জমায়েত। গণপরিবহনে সাবধানে চলাচল করতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে বাজার, মার্কেট বা শপিং মলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও। এর সবগুলো পরামর্শ এখন প্রায় সর্বত্র অনুপস্থিত। এভাবে চলতে থাকলে সংক্রমণ আবারও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ নীতি অনুসরণের কথা থাকলেও অনেকাংশেই এর বাস্তবায়ন নেই।
মাস্কবিহীন মানুষও পাচ্ছেন সার্ভিস। অফিস চলাকালীন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকের মুখেই এখন আর মাস্ক দেখা যায় না। কেউ কেউ মাস্ক ব্যবহার করলেও তা নামিয়ে রাখেন থুতনিতে। অনেকেই মাস্ক রাখেন ব্যাগে বা পকেটে। আর সরকারি অফিসগুলোতে যারা সেবা নিতে আসেন তারা থাকেন একেবারেই মাস্কবিহীন। আর সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অনুরোধও পতিপালন কারতে দেখা যায় না। তবে অধিক সচেতন কিছু মানুষ এখনও পকেটে রাখা হ্যান্ড সেনিটাইজার দিয়ে হাত সেনিটাইজড করেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, মুসল্লিরা অবশ্যই মুখে মাস্ক দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবেন। কিন্তু কেউই পালন করছেন না এই নির্দেশ। মাস্কবিহীন মুসল্লিরা অহরহ মসজিদে মানাজ পড়তে যাচ্ছেন। মাস্কবিহীন ইমাম নামাজ পড়াচ্ছেন। মাস্কবিহীন মোয়াজ্জিন দিচ্ছেন আজান। যদিও মসজিদের গেটে লিখে রাখা হয়েছে ‘নো মাস্ক-নো এন্ট্রি’ অথবা ‘মসজিদে মাস্কবিহীন প্রবেশ নিষেধ’। মসজিদগুলোর গেটে সাবান পানি রাখার ব্যবস্থা করার কথা বললেও এগুলো এখন আর চোখে পড়ে না।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গণপরিবহন মালিকরা। তারা ভুলে গেছেন সেই প্রতিশ্রুতি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী গণপরিবহন রেল, বাস বা লঞ্চে আসনের অধিক যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু সর্বত্রই এখন দাঁড়িয়ে বা গাদাগাদি করেই চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। চালক হেলপার কেউই এখন আর মাস্ক ব্যবহার করে না। অধিকাংশ যাত্রীদের মাস্ক থাকে থুতনিতে। সাবান পানি এবং হ্যান্ড সেনিটাইজার তো একেবারেই অনুপস্থিত। এ ক্ষেত্রে যাত্রী এবং পরিবহন মালিক পক্ষের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছিলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা দোকান, মার্কেট ও শপিংমল খুলবেন। কিন্তু বাজার, শপিংমলে এখন আর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কোনও বাধ্যবাধকতা দেখা যায় না। এক সময় মাস্কবিহীন ক্রেতা শপিংমলে প্রবেশাধিকার না পেলেও এখন পাচ্ছেন বাধাহীনভাবেই। ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন মাস্ক ব্যবহার না করেই। কারণ জানতে চাইলে উভয়েরই সহজ উত্তর-দম বন্ধ হয়ে আসে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া নেতারাও এখন নিশ্চুপ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১২ আগস্ট জারি করা সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনের ১.৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যেকোনও প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গহণ করা হবে।’ কিন্তু এখনও পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কেউ কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি পতিপালনে শৈথিল্য দেখানোর কোনও সুযোগ নেই। অন্যথায় সংক্রমণ বাড়বে। অবশ্যই আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। কেউ এর ব্যতিক্রম করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে। এখনও আমরা করোনা সংক্রমণ থেকে শতভাগ নিরাপদ নই। পৃথিবীর অনেক দেশেই কররোনার দ্বিতীয়-তৃতীয় ঢেউ এসেছে। সেই সব দেশ কঠিন সময় পার করেছে। আমরা তা চাই না। এর জন্যই সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। সচেতনতা প্রয়োজন।
Discussion about this post