হার্টবিট ডেস্ক
আমাদের সবারই প্রায় কমবেশি ভুলে যাওয়ার প্রবণতা (স্মৃতিভ্রম) রয়েছে। তবে আলজেইমারস ( Alzheimer’s) রোগে যারা আক্রান্ত ভুলে যাওয়ার উপসর্গ সবচেয়ে বেশি। আলজেইমারস রোগ একটি ডিজেনারেটিভ রোগ, যেটি প্রকৃতিগতভাবে অপরিবর্তনীয় ও প্রগতিশীল। এটি একপ্রকারের ডিমেনশিয়া (স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া) যা সেইসমস্ত অবস্থার সাথে জড়িত যা মস্তিস্কের ক্রিয়াকলাপের স্থায়ী হানির সাথে যুক্ত, শেষ পর্যন্ত যার ফলে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। উপমহাদেশে ডিমেনশিয়ার শিকার ৪ লক্ষের চেয়ে বেশী।
এটি একটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সমস্যা।
উপসর্গ :
১. স্মৃতিশক্তি লোপ ২. সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগা ৩. আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কে না চেনা৪. সাধারণ কাজ যেমন রান্নাবান্না, ড্রেস পড়া ভুলে যাওয়া ৫. চোখে দেখা ছবি ভুলে যাওয়া ৬. মুড সুইংস ৭. কোনো সমস্যায় পড়লে তা উত্তরণের চিন্তাশক্তি কমতে থাকা ৮. সমাজের সকল কার্যকলাপ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা ৯. কোনো জটিল কাজ করার সামর্থ না থাকা
কারণ
আলজেইমারস রোগের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা এখনও সম্ভব হয় নি। তবে গবেষণায় এটি নিরূপিত যে, এটি মষ্তিস্কের প্লাক ও টেঙ্গুল(যা হাইড্রোফসফোরাইলেটেড টাউ প্রোটিনের সমষ্টি) সংশ্লিষ্ট রোগ। ৫-১০% ক্ষেত্রে বংশগতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।এই রোগে আক্রান্তের মস্তিষ্কে তিনটি উপাদানের অস্বাভাবিক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছেঃ
1. অ্যামাইলয়েড প্লাক
2. নিউরোফাইব্রিলারী টেঙ্গুল (টাউ প্রোটিনে গঠিত এক ধরনের আঁশ)
3. অ্যাসিটাইলকোলিন।
এই রোগের মূল ঘটনার সূত্রপাত হয় অ্যামাইলয়েড বিটা নামক একধরনের প্রোটিন উৎপাদনের মাধমে যা পরবর্তীতে মস্তিষ্কের রক্তকণিকার ভেতরে দলা পাকিয়ে অ্যামাইলয়েড প্লাক গঠন করে। এই অ্যামাইলয়েড প্লাকই নিউরনের মৃত্যুর জন্য দায়ী।আরেক গবেষনায় উঠে এসেছে ক্রমোজোম ১৯ এ অবস্থিত Apolipoprotein E (APOE) gene অনেকটা দায়ী। আবার Amyloid precursor protein (APP) gene , Presenilin1 ( PSEN1), Presenilin2 ( PSEN2) এর মিউটেশনের কারণে ও আলজেইমার ডিজিজ হতে পারে।
আলজেইমারস ডিজিজ এর বিভিন্ন পর্যায় :
১. Mild cognitive Impairment সময়কাল — ৭ বছর এই পর্যায়ে ডিজিজ ছড়িয়ে পড়ে মস্তিষ্কের টেমপোরাল লোব থেকে।
২. Mild Alzheimer’s সময়কাল — ২ বছর এই পর্যায়ে ডিজিজ ছড়িয়ে পড়ে মস্তিষ্কের টেমপোরাল এবং প্যারাইটাল লোব থেকে।
৩. Moderate Alzheimer’sসময়কাল — ২ বছর এই পর্যায়ে ডিজিজ ছড়িয়ে পড়ে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব থেকে ৪. Severe impairment
সময়কাল – ২ বছর এই পর্যায়ে ডিজিজ ছড়িয়ে পড়ে মস্তিষ্কের অক্সিপিটাল লোব পর্যন্ত ২,৩,৪ ডিজিজ পর্যায়কে আলজেইমারস ডিমিনশিয়া বলে।
আলজেইমার ডিজিজ এর risk ফ্যাক্টর :
১. ৬৫ বছরের বেশি বয়স
২. বংশপরম্পরায় এই ডিজিজ থাকলে
৩. ডাউন সিন্ড্রোম
৪. মাদক গ্রহণ, ধুমপান
৫. মানসিক চাপ শনাক্তকরণ
পরীক্ষা :
১. মানসিক ও মস্তিষ্কের অবস্থা পর্যবেক্ষণ।
২. ল্যাবরেটরি টেস্ট
৩. মস্তিষ্ক পরীক্ষা — CT Scan , MRI , PEC , SPECT
৪. CSF পরীক্ষা
৫. Electro Encephalogram
৬. Electromyogram
চিকিৎসা :
এর কোনো পরিপূর্ণ চিকিৎসা নেই। তবে বিভিন্ন উপসর্গের জন্য কিছু ঔষধ ব্যবহার করা হয়। বিশ্বব্যাপী এখন ও এর ঔষধ আবিষ্কারে বিস্তর গবেষনা চলছে।
প্রতিকার :
১. ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক থেকে নিজেকে কন্ট্রোল এ রাখা
২. দুশ্চিন্তা থেকে বিরত থাকা
৩. হাসিখুশি জীবনযাপন করা
Discussion about this post