হার্টবিট ডেস্ক
দেশে গত ৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ৮ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২০ জন, নারী ৩২ জন। আবার শুধু ৭ তারিখের হিসাবে একদিনে মারা যাওয়া ৫৬ জনের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু দ্বিগুণ। এ সময় মারা যাওয়া ৫৬ জনের মধ্যে পুরুষ ১৯ আর নারী ৩৭ জন।
টানা দুদিন করোনায় নারীরা মারা যাচ্ছে বেশি। অথচ মহামারির শুরু থেকে পুরুষের মৃত্যুই বেশি ছিল। হঠাৎ কেন নারীর মৃত্যু বাড়ছে এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। তথ্য-উপাত্ত জড়ো হলে নিশ্চিত তথ্য দেওয়া যাবে।
১২ আগস্ট দেশে প্রথম করোনায় পুরুষ মৃত্যুকে ছাড়িয়ে যায় নারীর মৃত্যু। সেদিন অধিদফতর জানায়, করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ২১৫ জনের মধ্যে পুরুষ ১০৭ জন আর নারী ১০৮ জন।
২৭ আগস্ট মারা যাওয়া ১১৭ জনের মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৪৫ জন, নারী ৬১ জন। ২৯ আগস্ট ৮৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৪১ জন নারী ৪৮ জন। ৩০ আগস্ট পুরুষ ৪৫ জন আর নারী ৪৯ জন।
দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৬ হাজার ৭৩৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ২৫৯ জন আর নারী ৯ হাজার ৪৭৭ জন। শতকরা হিসাবে নারীর মৃত্যু পুরুষের প্রায় অর্ধেক।
বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, নারীর তুলনায় পুরুষ বাইরে বেশি যায় বলেই তারা আক্রান্ত হন বেশি। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে তাদের মৃত্যুও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীন।
তিনি বলেন, প্রথম ঢেউয়ের সময়ে যে স্ট্রেইন ছিল সেটা উচ্চমাত্রায় সংক্রামক ছিল না। কিন্তু এবারের স্ট্রেইনের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি। যার কারণে পরিবারে একজন সংক্রমিত হলে বাকিরাও সংক্রমিত হয়েছেন।
‘আমাদের দেশের পরিস্থিতিতে নারীদের হাসপাতালে ভর্তির বিষয়েও অনেক সিদ্ধান্ত জড়িত থাকে।’ এমনটা উল্লেখ করে অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন বলেন, হাসপাতালে ভর্তিতে পুরুষরাই বেশি গুরুত্ব পায়। নারীদের অনেকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে চান না।
নারীরা এখন সংক্রমিত হচ্ছে বেশি জানিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘মানুষ বেশি সংক্রমিত হয় ঘরে। তবে নারীদের আক্রান্ত বেশি হওয়ার অন্য কোনও কারণ রয়েছে কিনা সেটা সমাজতাত্ত্বিকরা বের করতে পারবেন।’
‘আগে কেউ সংক্রমিত হলে ঘরের সবাই হতো না। ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের কারণে পুরো পরিবার সংক্রমিত হচ্ছে। এতেও নারীদের সংক্রমণ বাড়তে পারে।’ যোগ করেন ডা. মুশতাক।
তবে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের পিছিয়ে থাকাটাও কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় টিকা পরামর্শক কমিটি (ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ) নাইট্যাগ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ মনে করেন, ‘টিকা গ্রহণে পিছিয়ে থাকায় নারীর মৃত্যু বাড়ছে। হরমোনাল কারণে নারীরা এতদিন সুরক্ষা পেলেও টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষরাই এগিয়ে ছিল।’
তবে ডা. মুশতাক হোসেনের মতো তিনিও ডেলটার দাপটের কথা বলেন। ‘ডেলটার দাপটে এখন নারী-শিশু সবার আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়েছে। আক্রান্ত বাড়লে তো মৃত্যুও বাড়বে।
Discussion about this post