হার্টবিট ডেস্ক
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত একদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২০ বছরের কম বয়সীরা হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭৫ জন। এর মধ্যে শূন্য থেকে এক বছর বয়সী রোগী ভর্তি হয়েছে এক দশমিক চার শতাংশ, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ২৬ দশমিক এক শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ২২ দশমিক তিন শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ১৯ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ১০ দশমিক চার শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ১২ দশমিক তিন শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ভর্তি হয়েছে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ আর ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের হাসপাতালে ভর্তির হার তিন দশমিক তিন শতাংশ।
একদিনে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে ঢাকার ২২০ জন ও ঢাকার বাইরের ৫৫ জন। এ ছাড়া চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ হাজার ৯১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ছাড়া পেয়েছেন ১০ হাজার ৮০৬ জন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার পেডিয়াট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পিআইসিইউতে রয়েছে মোট ১৭টি বেড। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই (দু’একজন বাদ দিলে সবই) ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু। এসব রোগীদের মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে কম বয়সী ছিল তিন বছরের একটি শিশু। আর সবচেয়ে বেশি বয়সী রোগীর বয়স ছিল ১৭ বছর।
ডা. মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, শিশুদের সংক্রমণের হার মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দেশে এতদিন ডেঙ্গুর যে গাইডলাইন মানা হচ্ছে সেখানে প্রথম চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে জ্বর কমে যায়। কিন্তু এখন দ্রুততার সঙ্গে ‘মাল্টি অর্গান ফেইলিউরে’ চলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অভিভাবকরা জ্বর হলে বাসাতেই রেখে দিচ্ছে। অথচ এবার জ্বর হলে প্রথম দিনে না হলেও দ্বিতীয় দিনে অবশ্যই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। এ ছাড়া চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে কোনও দ্বিধা বা সময়ক্ষেপণ না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
রাজধানীর বেসরকারি সেন্ট্রাল হাসপাতালেও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি আছেন তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ডেঙ্গু রোগী।
শিশু বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার বলেন, ভর্তি থাকা শিশুর মধ্যে অর্ধেক শিশুই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এ ছাড়াও পুরো হাসপাতালেই প্রায় অর্ধেক রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
৮ মাস বয়সী শিশুও এখন তার অধীনে ভর্তি রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কিশোর-কিশোরীদের আক্রান্তের হারও এবার অনেক।
এদিকে অধিদফতর জানাচ্ছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫২ জন। আর সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে এক হাজার ২৩৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এরমধ্যে ঢাকাতেই আছেন এক হাজার ৭৪ জন, বাকি ১৫৯ জন অন্য বিভাগে।
এ ছাড়া চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই ডেঙ্গুতে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৩৫ জন আর মারা গেছেন ছয়জন। গেল আগস্টে শনাক্ত হয়েছেন এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাত হাজার ৬৯৮ জন আর মারা গেছেন ৩৪ জন। তার আগের মাস জুলাই মাসে দুই হাজার ২৮৯ জন শনাক্ত হন, আর মারা যান ১২ জন। তবে এর আগ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কোনও মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছে অধিদফতর।
Discussion about this post