ডা. দীনা লায়লা হোসেন
নরমাল ডেলিভারি কথাটা শুনলেই বোঝা যায় এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সাধারণ মানুষ ভ্যাজাইনা বা মাসিকের রাস্তা দিয়ে সন্তান প্রসব বললেও চিকিৎসার পরিভাষায় এটি হলো নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি।
অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করেন, আমার কী নরমাল ডেলিভারি হবে? আসলে এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া বেশ কঠিন। কারণ, সময়ের সাথে সাথে গর্ভবতীর অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়। তবে নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে প্রস্তুতিটা আগে থেকেই শুরু করতে হবে।
১. খাটো নারীর জরায়ু ছোট এবং স্বাভাবিক হলো সন্তানও ছোট হবে। অনেক সময় মা খাটো কিন্তু পেটের সন্তানের আকার বড়। এক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হবে না। শিশুর মাথা জরায়ুমুখ দিয়ে বের হতে পারলেই নরমাল ডেলিভারি সম্ভব।
২. শিশুর গ্রোথ, মাথার অবস্থানের ওপর নরমাল ডেলিভারি বোঝা সম্ভব হবে। মায়ের পেটে সন্তানের অবস্থান উল্টা থাকলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হবে না।
৩. প্রথমবার কেউ অন্তঃসত্ত্বা হলে রিলাক্স থাকেন না। বার্থ ক্যানেল ফ্রি থাকে। এক্ষেত্রে শিশুর ওজন অনেক বেশি হয় এবং আমরা নরমাল ডেলিভারির পরামর্শ তাকে দেই না।
৪. গর্ভফুল সাধারণত জরায়ুর উপরে কিংবা সামনে-পেছনে থাকে। নরমাল ডেভিভারির জন্য সন্তান নিচের দিকে আর গর্ভফুল উপরের দিকে থাকতে হবে। এর উল্টো হলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হবে না। কারণ, জরায়ুমুখে আগে ফুল আসবে, এরপর সন্তান। ফুল আগে আসায় অনেক রক্তপাত হবে। এরপর সন্তান আসার সময়ও রক্তপাত হবে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মায়ের মৃত্যু হতে পারে। জরায়ুর নিচের অংশ থেকে জলদি রক্তপাত বন্ধ করা কঠিন। এজন্য নিচের দিকে ফুল থাকলে আমরা কখনোই নরমাল ডেলিভারির পরামর্শ দেই না।
৫. সন্তান পেটে থাকা অবস্থায় পানির পরিমাণ বোঝা যায়। পানি থাকলে প্রসবের সময় নবজাতকের মুখ খুঁজতে সুবিধা হয়। পানি কম থাকলে যে নালি দিয়ে সে মায়ের শরীর থেকে খাবার নেয়, তাতে সমস্যা দেখা দেয়। ৮ থেকে ২২ সেন্টিমিটার হলো নরমাল পানির পরিমাণ।
৬. সবকিছু ঠিক থাকার পরও নরমাল ডেলিভারির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। কারণ এই দীর্ঘ সময়ে গর্ভবতীর শরীরে নানা পরিবর্তন আসে।
৭. সবকিছু ঠিক থাকার পরও প্রসব ব্যথা না উঠলে চিকিৎসক অন্তঃসত্ত্বার নোগ্রাফি ও শারীরিক অবস্থা দেখে নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারির জন্য ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলবেন। এ ছাড়া কৃত্তিম উপায়ে ব্যথা উঠিয়ে ডেলিভারি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যে চিকিৎসক রোগীকে দেখছেন, তিনিই ভালো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। তবে কোনোভাবেই ৪০ সপ্তাহ হয়ে গেলে বাসায় বসে অপেক্ষা করা যাবে না।
৮. আরলি প্রেগনেন্সিতে রক্তপাত খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রেগনেন্সিতে রক্তপাত থাকবে না বা মাসিকের রাস্তা দিয়ে ডেলিভারি পর্যন্ত রক্ত যাবে না এটিই স্বাভাবিক। এই সময়ের মধ্যে রক্তপাত হলে খুব গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। কারণ এটি জরায়ুতে সন্তানের ঝুঁকি তৈরি করছে। তার ঠিকঠাক যত্ন হচ্ছে না। যত্ন বাড়াতে হবে। গর্ভবতীকে প্রথমেই বিশ্রামে থাকতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
Discussion about this post