ডা. শারমিন আব্বাসি
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে নারীদের শারীরিক কিছু পরিবর্তন এবং ডিম্বাশয়ে বিশেষ কিছু সিস্ট তৈরি হওয়াকে বলে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওডি)। এ নিয়ে সচেনতার মাস চলবে সেপ্টেম্বরজুড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বে মোট ১১ কোটি ৬০ লাখ নারী পিসিওডি’তে আক্রান্ত। রিপ্রোডাকটিভ নারীদের ২-২০ শতাংশই এ সমস্যায় ভুগছেন। বাংলাদেশেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক নারীর ডিম্বাশয়ে এত বেশি ডিম্বাণু থাকে, যা বেরোতে পারে না। সেই ডিম্বাণুর ঘরগুলোকে অনেকটা সিস্টের মতো দেখায়। এটাই পলিসিস্টিক ওভারি।
ডিম্বাশয়ের এই অবস্থানের কারণে শারীরিক যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, সেটাই হলো পিসিওডি। এই রোগের ফলে নারীদের শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিক্য দেখা দেয়। ফলে শরীরের নানা অংশে অবাঞ্ছিত লোম গজিয়ে ওঠে। যা প্রজনন ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে। ফলে সমস্যা দেখা দেয় গর্ভধারণে। বন্ধ্যাত্বের পেছনে এটিও একটি বড় কারণ।
সাধারণত ১৩ থেকে ৩৫ বছরের নারীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। জিনেটিক্যাল সমস্যা বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ছাড়াও আপনি হয়ত না জেনেই নিজের মধ্যেই পিসিওডির পরিবেশ তৈরি করছেন। যেমন—স্থূলতা, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ফাস্টফুড গ্রহণ বা চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ।
এ রোগের আরও কিছু লক্ষণ হলো অনিয়মিত মাসিক অথবা মাসিক বন্ধ থাকা, ব্রণ, অতিরিক্ত লোম হওয়া- মুখে, গলা, বুক ও পেটে, গলা বা হাত বা শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে কালো ছোপ দাগ, মাথার চুল পড়ে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি।
পিওসিডি প্রতিরোধ করতে
- অধিক প্রোটিন ও ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে হবে।
- খাদ্য তালিকায় শাকসব্জি, ফলমূল, ভিটামিন বি, সি, ই যুক্ত খাবার রাখুন।
- প্রচুর পানি পান করবেন। তবে একবারে না খেয়ে নিয়মিত বিরতিতে একটু পর পর খাবেন।
- প্রয়োজনে পরীক্ষা সাপেক্ষ ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট লাগতে পারে।
- চা, কফি যতটা পারা যায় কম খাবেন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং সক্রিয় থাকুন।
- দুঃশ্চিন্তা-হতাশা থেকে দূরে থাকুন, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন।
- ধূমপান ছাড়ুন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষূধ সেবন করুন (ওসিপি, অ্যান্টিঅ্যান্ড্রোজেন)।
সময়মতো চিকিৎসা না করালে হতে পারে-
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, রক্তে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এমনকি স্লিপ অ্যাপনিয়া, অ্যাবরসন, বন্ধ্যাত্ব ও জরায়ুর ক্যানসারও হতে পারে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, প্রসুতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
Discussion about this post