মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাবাদের অংশীদারিত্বে জোর বিশেষজ্ঞদের

হার্টবিট ডেস্ক

করোনাকালে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাবাদের আরও অংশীদারিত্বের উপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার (৩০ আগস্ট) বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে করোনাকালে গর্ভবতী মায়েদের সুরক্ষা ও এসময়ে বাবাদের দায়িত্বের বিষয়টি সম্পর্কে এই বিশেষজ্ঞ মত উঠে আসে।

ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল) এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ) এর যৌথ আয়োজনে হওয়া ‘করোনাকালে মাতৃস্বাস্থ্য এবং বাবার দায়িত্ব’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা মাতৃস্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। এসময় বাংলাদেশে মাতৃস্বাস্থ্যের বিভিন্ন ঝুঁকি, মাতৃত্বকালীন সময়ে সন্তানের বাবা ও পরিবারের দায়িত্ব, মাতৃদুগ্ধের গুরুত্ব এবং করোনাকালে প্রসূতিসেবার সংকটগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্য সমস্যার প্রতি দৃষ্টিপাত করে বলেন, করোনা ও লকডাউনের কারণে নিম্নআয়ের পরিবারগুলোতে মাতৃস্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিবারের উপর্জনকারী ব্যক্তি যেমন বাবারা কর্মহীন হওয়ায় তারা সন্তানের মায়ের যথাযথ যত্ন নিতে পারছেন না। মাতৃস্বাস্থ্যের গুরুত্বের বিষয়টি এই সময়ে আরো বেশি করে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বাবাদের উচিত মাতৃত্বকালীন সময়ে সন্তানের মায়েদের প্রতি আরো যত্নবান হওয়া ও মায়েদের কাজগুলো ভাগ করে নেয়া। একইসঙ্গে মা ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও বাবাকে ভাবতে হবে। কোভিড-১৯ সময়ে এ বিষয়টিও নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, আমাদের দেশে প্রথমবার গর্ভধারণ করা অধিকাংশ মা-ই কিশোরী। মা হতে গিয়ে তাদের যে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে হয় তা পরিবারের অন্য সদস্যরা ভাবেন না। প্রসবকালীন ঠিক সময়ে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ার ফলে দেশে মাতৃমৃত্যুর ৫৪ শতাংশ ঘটে বাড়িতে। করোনাকালে মায়েদের সেবাকেন্দ্রে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা আরো বেড়েছে। পরিবার ও সন্তানের বাবার সহযোগিতা ছাড়া এই সংকট কাটিয়ে উঠা কঠিন। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের এখন এক সামাজিক যুদ্ধে নামতে হবে।

ওয়েবিনারে মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মুরাদ আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের দেশের নারীরা গর্ভকালীন সময়ে এমনিতেই অপুষ্টিতে ভোগেন। এর সঙ্গে করোনাকালে যোগ হয়েছে বাল্যবিবাহের বাড়তি ঝোঁক। অল্প বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত মায়েদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের ভাবতে হবে। আশার বিষয় হচ্ছে মায়েরা এখন চাইলে কোভিড-১৯ টিকা নিতে পারছেন। সর্বোপরি মাতৃত্ব নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেয়া চলবে না।

অনুষ্ঠানে ইউসিএল এর করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান শামীমা আক্তার বলেন, করোনাকালে মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা ও মায়ের সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবার কথা ভেবেই বিএইচআরএফ’কে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই ওয়েবিনারের উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া, মাতৃদুগ্ধপান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও উৎসাহ তৈরি করতে ‘হরলিক্স মাদার’স প্লাস’ ইতোমধ্যে মাসব্যাপী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে। দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা তৈরি করতে আমাদের এসব পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।

বিএইচআরএফ এর সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রাব্বির সঞ্চালনায় মাতৃস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির এই ওয়েবিনারে ধন্যবাদজ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম এর সভাপতি তৌফিক মারুফ।