হার্টবিট ডেস্ক
দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত-মৃত্যু কেন? এ প্রশ্নটি জনমনে ঘুরে ফিরছে বারবার। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ ধরণের সংবাদও প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিদিন। তািই বিষয়টিকে আমলে নিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) গত মে ও জুন মাসে সংক্রমিত ১ হাজার ৩৩৪ জনের ওপর গবেষণা চালায়। এতে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের ৭৪২ জন বা শতকরা ৫৫ ভাগই টিকা নিয়েও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০৬ জন ছিলেন, যারা পূর্ণ ডোজ টিকা নেওয়ার অন্তত ১৪ দিন পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
গবেষণার ফলাফলে আইইডিসিআর জানায়, করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা যারা নিয়েছেন, তারা করোনায় আক্রান্ত হলেও তাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের সমস্যা, হাসপাতালে ভর্তির হার এবং মৃত্যুঝুঁকি টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় কম। টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত জটিলতায় ভুগেছেন শতকরা ১১ ভাগ রোগী। অপরদিকে দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে এই হার ছিল ৪ ভাগ।
অক্রান্তদের মধ্যে যারা আগে থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতার মতো অসংক্রামক রোগে ভুগছিলেন, তাদের বিষয়টি আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করেছে সংস্থাটি। এ ধরনের রোগীদের মধ্যে যারা টিকা নেননি, তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতায় ভোগার হার পূর্ণ টিকা গ্রহণকারীদের তুলনায় ১০ ভাগ বেশি। যারা দুই ডোজ টিকা নিয়েও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ৭ ভাগ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছেন। আর যারা টিকা নেননি, তাদের ২৩ ভাগকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
এছাড়াও যেসব করোনা রোগী আগে থেকেই বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে ভুগছিলেন, তাদের মধ্যে টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের ১০ ভাগকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। অপরদিকে টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে এই হার শতকরা ৩২ ভাগ।
প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন। টিকা নেওয়ার পরে বেশিরভাগ রোগীই আর আক্রান্ত হবে না, হলেও উপসর্গগুলো মৃদু থাকবে। এক্ষেত্রে রোগী বাসায় থেকেই সুস্থ হয়ে যাবেন। তবে যাদের আগে থেকেই বিভিন্ন রোগ ছিল ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছিল, তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি নাও হতে পারে।’
টিকা নেওয়ার পরেও মৃত্যু সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তাদের ক্ষেত্রে এমনটি হতে পারে যে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও তাদের ইমিউনিটি তৈরি হয়নি। ভ্যাকসিন নিলে করোনায় সংক্রমিত হবেন না, এটা ঠিক নয়। ভ্যাকসিন গ্রহণের পরেও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে তা মৃত্যু হওয়ার মতো সিভিয়ার অবস্থায় যাবে ন। যদি কারও মৃত্যু হয়, তবে সে করোনা ছাড়াও ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার, কিডনি রোগ, হৃদরোগ বা এই ধরনের কোনো জটিল অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিকার মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি কোনো ব্যক্তি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন। একইসঙ্গে আক্রান্ত হলেও সিভিয়ার পর্যায়ে যাবে না, যদি তিনি অন্যকোনো মারাত্মক রোগের রোগী না হন। তবে যদি রোগী আগে থেকেই বার্ধক্যজনিত সমস্যা বা অন্যকোনো রোগের কারণে খুব দুর্বল অবস্থায় থাকেন, তবে তাদের বাঁচানো কঠিন।’
Discussion about this post