হার্টবিট ডেস্ক
নাক দিয়ে নিঃশ্বাস দিলেই নেওয়া হয়ে যাবে করোনা টিকা। এমন এক করোনা ভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে ক্লিনিক্ল্যাল ট্রায়ালের জন্য আবেদন করা হচ্ছে।
এই টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন সুইডেনের ক্যারোলিস্কা ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। পাউডারের মতো নাক দিয়ে নেওয়ার সেই টিকা সুইডেনে ইতোমধ্যে প্রাণীর দেহে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, এবং সেখানে শতভাগ সফলতা পাওয়া গেছে বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন। এখন বিজ্ঞানীরা মানব ট্রায়াল করতে চান।
এই গবেষণাকে যুগান্তকারী বলে বর্ণনা করছেন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। তিনি বলেন, ‘প্রচলিত টিকা সংরক্ষণে অনেক ব্যবস্থা নিতে হয়। সেটা নেয়ার জন্য কেন্দ্রে যেতে হয়। কিন্তু এই গবেষণাটি যদি সফল বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটা শুধু করোনাভাইরাসের জন্য নয়, অন্যসব টিকা নেয়ার ব্যাপারটিও অনেক সহজ করে দেবে।’
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১৪ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন প্রায় ২৪ হাজার মানুষ। ফলে বাংলাদেশে কোন টিকা উৎপাদনের সুযোগ পেলে সেটা রোগ প্রতিরোধে বিশাল সুবিধা দেবে বলে এই চিকিৎসক বলছেন।
প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি চিকিৎসকের উদ্যোগে মানব ট্রায়ালের প্রথম পর্যায়ের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেজন্য এ মাসেই প্রস্তাবটি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) জমা দেওয়া হবে।
সুইডেনের ক্যারোলিস্কা ইউনিভার্সিটি গবেষণা করে এই টিকাটি আবিষ্কার করেছে। বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশ নাক দিয়ে নেয়ার মতো টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। সুইডেনের ইম্যিউন সিস্টেম রেগুলেশন হোল্ডিং এবি বা আইএসআর মানব ট্রায়ালের জন্য কন্ট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিআরও) হিসাবে বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে।
সিআরও হিসাবে কাজ করবেন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ এবং অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।
প্রচলিত টিকার সঙ্গে এই টিকার কী পার্থক্য?
অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলছেন, এটি একেবারে অভিনব একটি আবিষ্কার হবে। এটা টিকার ব্যাপারে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দেবে।
– এই টিকার জন্য কোন সূঁচ ব্যবহার করতে হয় না অর্থাৎ তা ইনজেকশন আকারে দিতে হয় না। এটি নাক দিয়ে টেনে নেয়া যাবে।
– টিকা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে যেতে হবে না। বাসায় থেকে নিজেরাই টিকা নিতে পারবেন।
– ফ্রিজে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখার দরকার হবে না। বাসার স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা যাবে
– নিউমোনিয়ার মতো অনেক ভাইরাস বায়ুবাহিত, নাক দিয়ে প্রবেশ করে। যেহেতু এটা নাকের মাধ্যমে দেয়া হবে, ফলে শরীরের সিস্টেমিক অ্যান্টিবডির পাশাপাশি স্থানীয় একটি অ্যান্টিবডি তৈরি হবে।
-সহজে পরিবহন, সরবরাহ করা যাবে, ব্যবহারও সহজ হবে।
যেভাবে হবে মানব পর্যায়ের গবেষণা
অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির গণমাধ্যমকে বলছেন, ‘আমরা রিসার্চ প্রটোকল তৈরি করেছি। এই মাসের শেষের দিকে সেটা বিএমআরসিতে এথিক্যাল পারমিশনের জন্য জমা দেবো। অনুমতি পাওয়া গেছে আশা করা যায়, সামনের মাসেই ট্রায়াল শুরু করা যাবে।’
তবে এটা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।
টিকার মতো ওষুধ আবিষ্কারে প্রাণীদেহে পরীক্ষার পর তিন দফায় মানব দেহের ওপর পরীক্ষা করতে হয়। স্বেচ্ছাসেবীরা এতে অংশ নিয়ে থাকেন।
প্রথম দফায় অল্প সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। সেখানে নিরাপদ বলে প্রমাণিত হলে সেই দ্বিতীয় দফায় আরও বেশি মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। সেখানে সফলতা পাওয়া গেছে তৃতীয় পর্যায় কয়েক হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে ফেজ-ওয়ান ট্রায়ালে ১৮০ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যারা সবাই স্বাস্থ্যকর্মী। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই পরীক্ষা হতে পারে।
সাধারণত যে দেশে ফেজ-ওয়ান ট্রায়াল হয়ে থাকে, সেই দেশেই পরবর্তী ফেজের ট্রায়ালগুলো হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে পরীক্ষা করে কী লাভ?
সুইডেনের এই আবিষ্কারের তথ্য জানতে পেরে ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি এই ট্রায়াল বাংলাদেশে নিয়ে আসার ব্যাপারে উদ্যোগী হন।
আইএসআর মালয়েশিয়া, মালদোভাসহ কয়েকটি দেশে পর্যালোচনার পর বাংলাদেশে ট্রায়ালে আগ্রহী হয়।
অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলছেন, ‘বাংলাদেশে ট্রায়াল হলে আমরা এই টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবো। আমরা সেটা উৎপাদনের অনুমতি পাবো। ফলে এটা আমাদের জন্য একটি বিরাট সুযোগ হবে।’
‘সেক্ষেত্রে এই টিকাটি আমরা দেশেই উৎপাদন করতে পারবো। বলা যেতে পারে, গ্লোবাল মার্কেটে আমার একটা শক্ত অবস্থান তৈরি হবে’ – তিনি বলছেন।
৬ জুলাই এই টিকার উৎপাদনের ব্যাপারে বাংলাদেশি কোম্পানি ইউনিমেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে আইএসআর।
আইএসআরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে এই টিকার উৎপাদন ও সরবরাহের এমওইউ করেছে আইএসআর।
অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি ইউনিমেড বছরে ১০ কোটি ইউনিট তৈরি করতে পারবে। পরবর্তী পাঁচ বছরে সেটি ৩০ কোটিতে নিয়ে যেতে পারবে। আইএসআর লভ্যাংশ এবং রয়্যালটি পাবে।
এর আগে চীনের টিকা সিনোভ্যাকের মানব ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরবর্তীতে নানা জটিলতায় তা আটকে যায়।
বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে দেশীয় বঙ্গভ্যাক্সসহ ভারত ও চীনের দুইটি টিকার ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশে মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকার পাশাপাশি, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
Discussion about this post