হার্টবিট ডেস্ক
আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত ও বেদনার দিন। জাতীয় শোক দিবস আজ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত হয়েছিল এ কলঙ্কিত অধ্যায়। ৪৬ বছর আগে এ দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ক্ষমতালোভী নরপিশাচ কুচক্রী মহল।
বাঙালির মুক্তির মহানায়ক স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে যখন ক্ষত-বিক্ষত অবস্থা থেকে দেশটির পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তখনই ঘটানো হয় ইতিহাসের নির্মম এ ঘটনা।
সেদিন ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ ও মেয়ে বেবি, সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।
প্রতি বছর দিনটি আসে বাঙালির হৃদয়ে শোক আর কষ্টের দীর্ঘশ্বাস হয়ে। পুরো জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করে। গত বছরের মতো এ বছরও করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতিতেও জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে আগস্টের প্রথম দিন থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
আজ জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে পালন করা হবে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে মহান আল্লাহর দরবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকার বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্ট শাহাদতবরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সদস্য ও অন্য শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক ও ফুলের পাপড়ি অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এছাড়া জাতীয় দৈনিক ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/গ্রোথ সেন্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জাতীয় শোক দিবসের পোস্টার স্থাপন ও এলইডি বোর্ডের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও সংস্থা জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে। এরপর জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারবর্গের নিষ্ঠুর বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের বিচারকার্য শুরু হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দীর্ঘ ৩৪ বছর পর সেই কলঙ্ক থেকে জাতির দায়মুক্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায় অনুযায়ী ওইদিন মধ্যরাতের পর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়। এর মধ্য দিয়ে জাতির জনককে হত্যা, ষড়যন্ত্র এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের ঘৃণ্য ও তমসাচ্ছন্ন অধ্যায়ের অবসান ঘটে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাঙালির বিজয়ের অভিযাত্রাও আরেক ধাপ এগিয়েছে। বিদেশে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোক বার্তায় বলেছেন, আমরা জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছি। আশা করি, জাতির পিতার হত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল সেটাও একদিন বের হয়ে আসবে। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারও সম্পন্ন হয়েছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের সুযোগ বন্ধ হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্র বিরোধী চক্রের যে কোনো অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
Discussion about this post