হার্টবিট ডেস্ক
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আজ। ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্যোগ নেয় ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স’। ২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ২৮ জুলাই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস ভাইরাস নির্মূল করতে হবএমন লক্ষ্যে এ বছরের স্লোগান, ‘হেপাটাইটিস নির্মূলে আর বিলম্ব নয়’।
হেপাটাইটিস একটি ভাইরাসজনিত রোগ। বিশ্বে প্রতিবছর ১৫ লাখ মানুষ এই ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করে। ১৯৯৫ সালে চার্লস গোর নামের একজন ব্রিটিশ নাগরিক হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তখন কোনো হেলথ গাইডলাইন ছিল না। তাই তিনি চিকিৎসায় কোনো সহযোগিতা পাচ্ছিলেন না। নিজের টাকায় উচ্চ মূল্যের ওষুধ নিয়ে সুস্থ হন। তিনি প্রথম কয়েকজন রোগীকে নিয়ে হেপাটাইটিস সি ট্রাস্ট গঠন করেন। ২০০৪ সালে এই ব্রিটিশ নাগরিক প্রথম হেপাটাইটিস দিবস পালন শুরু করেন।
২০০৮ সালে ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স গঠিত হয় এবং ১৯ মে থেকে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন শুরু হয়। বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিস রোগী কল্যাণ সমিতির ব্যাপক প্রচারণার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১০ সালের ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে একটি নীতিমালা গ্রহণ করে। এ নীতিমালায় হেপাটাইটিস সির সঙ্গে হেপাটাইটিস বিকেও আনা হয়। হেপাটাইটিস বির আবিষ্কারক অধ্যাপক বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গের জন্মদিন ২৮ জুলাইকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই তারিখকে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ঘোষণা করে। অধ্যাপক বারুচ শুধু হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের আবিষ্কারকই নন, তিনি এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন। এ জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অন্যান্যবারের মতো এ বছর দিবসটি পালনে ব্যাপক আয়োজন না থাকলেও বিভিন্ন সংস্থার ভার্চুয়াল সভা-সেমিনারের কর্মসূচি রয়েছে। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো বিশ্ব জুড়ে হেপাটাইটিস রোগ নির্ণয়, তার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সচেতনতা গড়ে তোলা।
হেপাটাইটিস এক নীরব ঘাতক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে প্রায় ১ কোটি মানুষ আক্রান্ত। বেসরকারি হিসাবে হেপাটাইটিসে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় দেশে। হেপাটাইটিস নিয়ে উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে সংক্রমিত ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানেন না যে তার শরীরে এই ভাইরাস আছে।
লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জন্ডিস নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের শতকরা ৭৬ ভাগ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দূষিত রক্ত, সিরিঞ্জ, মা থেকে সন্তানের দেহে এবং অনৈতিক মেলামেশার কারণে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে। সাবধানতা অবলম্বনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।
Discussion about this post