হার্টবিট ডেস্ক
দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিয়ে যে সংকট ছিলো তার অবসান হতে যাচ্ছে। টিকা নিয়ে স্বস্তি ফিরছে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। আর টিকা প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলছে বলে টিকা নিয়ে স্বস্তি ফিরছে জনমনে ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, দেশে বর্তমানে সিনোফার্ম, মডার্না এবং ফাইজারের টিকা দেওয়া চলছে। আর টিকাদান কর্মসূচির শুরু হয়েছিল যে কোভিশিল্ড দিয়ে, সেটার সংকটের কারণে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষ এ টিকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় রয়েছে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে তৈরি কোভিশিল্ড টিকার মাধ্যমে। সেরামের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ টিকার চুক্তি হলেও ভারত টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে বিপাকে পরে বাংলাদেশ।
চুক্তির মাত্র ৭০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর আর সেরাম থেকে টিকা আসেনি। তবে ভারত সরকারের উপহারসহ দেশে কোভিশিল্ড এসেছে মোট এক কোটি দুই লাখ ডোজ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এখন পর্যন্ত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৩৩ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৮ জন। টিকা স্বল্পতার কারণে নিবন্ধন বন্ধ হয় গত ৪ মে থেকে। যদিও অতি সম্প্রতি সেটি পুনরায় চালু হয়েছে। আর কোভিশিল্ড টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয় ২৬ এপ্রিল।
শিগগিরই কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ আসবে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে তৈরি কোভিশিল্ড টিকার দ্বিতীয় ডোজের জন্য যারা অপেক্ষায় রয়েছেন তারা খুব শিগগিরই টিকা পাবেন।
এদিকে আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় দুই কোটি ডোজ টিকা পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর মধ্যে ১৭ জুলাই (রাত ও ভোরে) এসেছে সিনোফার্মের ২০ লাখ ডোজ। আর ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় দেশে এসে পৌঁছাবে মডার্নারও আরও ৩০ লাখ ডোজ।
টিকার সমস্যা কেটে গেছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশের টিকার সমস্যা আল্লাহর রহমতে কেটে গেছে। আগামী আগস্ট মাসে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় ফাইজার বায়োএনটেকের আরও ৬০ লাখ ডোজ টিকা আসছে।
সব মিলিয়ে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে দেড় থেকে পৌনে দুই কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশের হাতে আসবে, বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আর এই দেড় থেকে পৌনে দুই কোটি ডোজের ভেতরেই মডার্না এবং সিনোফার্মের টিকা দেশে এসেছে দুই দফায়।
প্রসঙ্গত, চীন থেকে দেড় কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কেনার চুক্তি হয়েছে। আর তিন মাসের মধ্যে এসব টিকা দেশে এসে পৌঁছানোর কথা।
এদিকে, টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে নিতে আপাতত মনে হচ্ছে টিকার সংকটে পড়তে হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক। রবিবার (১৮ জুলাই) বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ২০ লাখ ডোজ টিকা দুই ফ্লাইটে দেশে পৌঁছেছে। আর সব মিলিয়ে সিনোফার্ম থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫১ লাখ ডোজ টিকা এলো।
করোনা প্রতিরোধে সংশয় না রেখে সহজলভ্য টিকা গ্রহণ করার আহ্বানও জানান তিনি।
এ ছাড়া সোমবার (১৯ জুলাই) মডার্নার ৩০ লাখ ডোজ আসার আগে গত ৩ জুলাই রাত সাড়ে ১১টায় প্রথম চালানে মডার্নার সাড়ে ১২ লাখ টিকা ঢাকায় আসে। সেদিন রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মডার্নার ২৫ ডোজ টিকা আসে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্র জানায়, আশা করা যাচ্ছে এ মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের শুরুতে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় জাপানের উপহার দেওয়া অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ টিকা হাতে আসতে পারে। সূত্র জানায়, চীনের ২০ লাখ ডোজ ছাড়াও আগামী আগস্টে আরও ৪০ থেকে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাবে। একইসঙ্গে রাশিয়া থেকেও ১০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যেতে পারে।
এদিকে, বাংলাদেশকে ২৯ লাখ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিচ্ছে জাপান। জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইটো এক টুইট বার্তায় একথা জানিয়েছেন। টুইটে তিনি বলেন, বাংলাদেশে খুব শিগগিরই ২৯ লাখ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাঠানো হবে। কোভিড মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে আছে জাপান।
বাংলাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় ১৩ কোটির বেশি মানুষকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। আর কোভ্যাক্স থেকে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার আশা করছে দেশ।
চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কোভ্যাক্স থেকে টিকা পাওয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিশ্বজুড়ে টিকার সংকট তৈরি হওয়ায় তা পিছিয়ে যায়।
Discussion about this post