প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রসূতি মায়েদের মৃত্যু বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ভারতীয় বা ডেল্টা ধরন দেশে বিস্তারের পরই প্রসূতিদের মৃত্যুঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে বহুগুণ। অধিকাংশেরই অক্সিজেন লাগছে। আর যাদের আইসিইউতে নেওয়া হচ্ছে, তাদের মধ্য থেকে খুব কমসংখ্যকই ফিরছেন। এ পরিস্থিতিতে প্রসূতি মায়েদের টিকা প্রয়োগ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে নারী, বিশেষ করে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুহার শীর্ষে। গত সাত দিনে হাসপাতালটির আইসিইউতে করোনা আক্রান্ত ছয় নারীর মৃত্যু হয়েছে। যেখানে চারজনই ছিলেন প্রসূতি। তাদের একজন সন্তান জীবিত রেখেই পৃথিবীর মায়া ছেড়েছেন। বাকি দুজন পেটে সন্তান নিয়ে মারা গেছেন। সন্তান জন্মদানের পরই একজনকে হাসপাতালটির আইসিইউতে আনা হয়েছে। কিন্তু সেই নবজাতক না ফেরার দেশে চলে গেলেও মুমূর্ষু মাকে এখনও জানানোর সাহস পায়নি তার পরিবার। এদিকে আরেক চিকিৎসক মা সাত মাসের সন্তান পেটে নিয়ে এখনও লড়ে যাচ্ছেন করোনার সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই যেকোনো ফ্লু বা অন্য কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার বুক–পেটের মধ্যের ডায়াফ্রাম নামক পর্দাটি এ সময় একটু ওপরের দিকে উঠে যায় বলে স্বাভাবিকভাবেই শ্বাসকষ্ট হয়। সংক্রমণের জন্য সাধারণ মানুষের তুলনায় গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট বেশি হতে পারে। তাই করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত প্রসূতি মায়েরা ‘হাইরিস্ক জোনে’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো যেখানে বলছে- প্রেগন্যান্ট বা দুগ্ধদানকারী মা টিকা নিতে পারবেন, সেখানে সরকার সেই প্রথম থেকে এই দুই শ্রেণির নাগরিকদের টিকা দেওয়া থেকে বিরত আছে। ইতোমধ্যে করোনার ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েরা হাইরিস্ক জোনে আছেন এবং অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এমতাবস্থায় আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ চাইলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘দুগ্ধদানকারী অনেক ফ্রন্টলাইনার এরইমধ্যে টিকা নিয়েছেন, আমি নিজেও নিয়েছি, সুস্থ আছি। এ বিষয়ে আশা করছি কর্তৃপক্ষ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) সার্জারি বিভাগের একজন আবাসিক চিকিৎসক বলেন, ‘সাত দিনের ব্যবধানে আমার দুই অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। পরিচিত আরও তিনজন এমন অবস্থায় আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। ইসরায়েলে ১৫ হাজার গর্ভবতী মাকে ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়েছিল। তাদের এফিক্যাসি রেট ছিল ৭৮ শতাংশ। টিকা প্রয়োগের পর কারও তেমন কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিশেষ অনুরোধ থাকবে, গর্ভবতী মায়েদের অন্তত ফাইজার/মডার্নার টিকা প্রদানের সুযোগ যেন করে দেওয়া হয়।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে কর্মরত আরেক নারী চিকিৎসক বলেন, ‘সকালে উঠেই খবরে দেখছি যে, প্রেগন্যান্ট চিকিৎসক কোভিড জটিলতায় মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আগের ধরনগুলো গর্ভবতীদের জন্য মৃদু উপসর্গ ঘটালেও এবারের ধরন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।’ সুত্র- ঢাকা পোস্ট
Discussion about this post