হার্টবিট ডেস্ক
দেশে মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যে ১৫ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্রাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমপিএ)।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) বিপিএমপিএর এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, ‘করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৬৭ জন চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের মধ্যে বেসরকারি চিকিৎসক ৬৩ জন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক ৭৪ জন। যাদের অনেকেই আমাদের সংগঠনের সদস্য।’
করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, ‘বিগত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বেশি মাত্রায় সংক্রমনশীল হওয়ার কারনে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগী মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে ঢাকার চেয়ে গ্রামে ও মফঃস্বল শহরে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ঢাকায় সংক্রমন যখন বেশি ছিল তখন রোগী মৃত্যুর অনুপাত যা ছিল, বর্তমানে তা অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে দেরীতে হাসপাতালে আসাকে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এর পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থাতে কোন ঘাটতি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার।’
এ সময় করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার ভূয়াসী প্রশংসা করে বলা হয়, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরলসভাবে কাজ করেছেন বিধায় আমরা বৈশ্বিক অনেক আশঙ্কাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে ভাল অবস্থানে আছি। করোনায় মৃত্যু সংখ্যা আমাদের দেশে এখনও তুলনামুলকভাবে অনেক কম। বিশ্বের অনেক দেশ করোনার টিকা পাওয়ার আগে আমাদের জন্য টিকার ব্যাবস্থা করেছেন তিনি। যার ফলে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেক কম করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাফল্য এখানেই। বিশ্বে তিনি ও বাংলাদেশ আজ রোল মডেল। তাই সামনের দিনগুলোতে যাতে আমাদের সাফল্যকে ধরে রাখতে পারি এবং আমাদের কর্মকাণ্ড যাতে সুপরিকল্পিতভাবে এগোয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্ববান হতে হবে। এমন কোন কাজ করা যাবে না যা দ্বারা প্রধানমন্ত্রীর নেত্রিত্বে অর্জিত সাফল্যসমূহ ম্লান হয়ে যায়।’
রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যে প্রস্তাবনা
১. জেলা ও বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনবোধে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তর করতে হবে।
২. বেসরকারি হাসপাতালগুলো সাধারন বা নন- কোভিড রোগীর চিকিৎসার ব্যাবস্থা করতে হবে।
৩. হাসপাতালের শয্যাসংখা বৃদ্ধি করার সুযোগ না থাকলে কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল ও কলেজ ভবনকে অস্থায়ী হাসপাতালে রুপান্তর করে রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।
৪. রেমডেসিভিরসহ অন্যান্য ওষুধ নিয়মিতভাবে গরীব রোগীদের জন্য সরবরাহ করতে হবে।
৫. জাতীয়ভাবে প্রণীত করোনা চিকিৎসা গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে কিনা তা মনিটর করতে হবে।
৬. চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। ৩৯ তম বিসিএস-এ নন-ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া অত্যন্ত সহজ বিধায় তাদেরকে নিয়োগ দিয়ে চিকিৎসক সঙ্কট দূর করা যায়।
৭. চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্য কর্মীকে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা নিয়ে টালবাহানা না করে যথাযথভাবে প্রদান করতে হবে। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে যে, এ পর্যন্ত কোন বেসরকারি চিকিৎসককে প্রণোদনার অর্থ দেওয়া হয়নি। বেসরকারি চিকিৎসকরাও করোনা রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে রোগাক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। তাদের পরিবারের কথা ভেবে তাদেরকেও সমভাবে প্রণোদনা দিতে হবে।
৮. যে সকল রোগী বাসায় অক্সিজেন নেয় তারা মারাত্মক (সিভিয়ার) ক্যাটাগরির। এই ধরণের রোগী যে কোন সময় খারাপ হয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে মারা যেতে পারে। সেজন্য এই ধরনের রোগীকে বাসায় চিকিৎসা না দিয়ে আইসোলেসন সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া উত্তম। এজন্য জেলা পর্যায়ে আইসলেসন সেন্টার তৈরি করতে হবে।
৯. যে সকল মাইলড ও মোডারেট রোগীর বাসায় আইসলেশনে থাকার ব্যাবস্থা নেই তাদেরকে আইসলেশন সেন্টারে রাখতে হবে।
১০. সিপাপের মাধ্যমে আক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করে অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা কমাতে হবে। কারণ সিপাপ যন্ত্রটি হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলার মতই কার্যকরী। তবে এতে অক্সিজেন অনেক কম লাগে।
১১. কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে শনাক্তদের কোয়ারেন্টাইন করাতে হবে। কন্টাক্ট ট্রেসিং কার্যক্রম বেশিরভাগ জেলায় এনজিও সংস্থা দিয়ে করানো হচ্ছে যা নিয়মিত মনিটরিং -এর ব্যাবস্থায় আনতে হবে।
১২. কন্টাক্ট ট্রেসিং,মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা নিশিত করতে জনগণকে উদবুদ্ধ করতে জনপ্রতিনিধি ও মসজিদ-মন্দিরের ইমাম ও পুরহিতকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
১৩. লকডাউন যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। অলিতে গলিতে নজরদারি করতে হবে।
১৪. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমলাদের দৌড়াত্ব কমিয়ে সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাক ক্ষমতাবান করতে হবে।
১৫. জেলা পর্যায়ে বিএমএ ও বিপিএমপিএ নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
Discussion about this post