পারভেজ রেজা
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে দুই ডজন ব্যাটারি থেকে সীসা প্রক্রিয়াজাত করার অনুমোদনহীন কারখানা তৈরি হয়েছে। এসব কারাখানা থেকে বাতাসে ছড়াচ্ছে তীব্র এসিড গ্যাস ও সীসাসহ নানা রকম ক্ষতিকর পদার্থ।
রাজধানীর ডেমরার ধার্মিক পাড়ার রাস্তার দুই পাশে জলমগ্ন এলাকা। যেখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ বেড়াতে আসেন। কেউ শিশুদের নিয়ে নৌকা ভ্রমন করছেন।
আবার কেউ কেউ বাঁশের মাচায় বসে পরিবার নিয়ে আহার করছেন। বিকেলের দিকে একটু নির্মল বায়ু আর পানি দেখতেই রাজধানীবাসীর পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে উঠেছে এলাকাটি।
যে নির্মল বায়ুর জন্য নগরবাসীর বেড়াতে আসা; তারা কেউ জানেন না, নির্মল বায়ুর পরিবর্তে তাদের ফুসফুসে কি নিচ্ছেন বা পানি থেকে শরীরে কি যাচ্ছে।
সীসা গলানো ভাট্টি এলাকায় বাস করা শিশুদের রক্তে স্বাভাবিকের চেয়ে দশগুন বেশি সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আইসিডিডিআরবি’র গবেষণায়। দীর্ঘদিন ধরে তাদের দেহে সীসার প্রভাব থাকলে একটি বড় জনগোষ্ঠি স্থায়িভাবে রোগাক্রান্ত ও মেধাহীন হয়ে পড়বে বলে ভবিষ্যৎবাণী করছেন গবেষকরা।
কোন রকম সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া খোলা আকাশের নিচে পরিবেশ সন্ত্রাসীদের ব্যাটারি থেকে সীসা সংগ্রহের এমন কর্মকান্ডের কারণে জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করছে বলে শঙ্কা তৈরী হয়েছে। ভাট্টি এলাকার আশে পাশে থাকা মানুষরা বলছেন, সীসা গলানোর সময় তীব্র গন্ধে তাদের দম আটকে আসে। রাতের বেলা জানালা খুলে ঘুমানো যায় না।
ব্যাটারি থেকে ফেলা এসিড ও সিসার দূষণের কারণে ভাট্টিও ও কারাখানা এলাকার মাছ এই বর্ষার নতুন পানিতেও মরে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্যাসোলিন ও টু স্ট্রোক অটোরিক্সা বন্ধ করার পর ঢাকার বাতাসে সীসার মাত্রা ৪৬০ থেকে ৭০ ন্যানোগ্রাম পার কিউবিক মিটারে নেমে এসেছিল। কিন্তু গত ৫ বছরে সীসার মাত্রা আবারও তিনগুন বেড়ে ২১০ ন্যানোগ্রাম পার কিউবিক মিটারে উঠে গেছে।
আশুলিয়ার কাঠগড়ায় একটি পরিত্যাক্ত ভাট্টির ২০০ মিটারের মধ্যে থাকা ৬৯ জন শিশুর ওপর গবেষণা করেছে আইসিডিডিআরবি। গবেষণায় সব শিশুর রক্তেই স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি সীসার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। রক্তে সীসার স্বাভাবিক মাত্রা যেখানে ৫ মাইক্রোগ্রাম পার ডেসিলিটার সেখানে এই শিশুদের মধ্যে সর্বনিম্ন ১৯ থেকে সর্বোচ্চ ৪৭ মাইক্রোগ্রাম পার ডেসিলিটার সীসা পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোন ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাটারি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপনের কারণে দেশের জনগোষ্ঠির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হতে পারে মেধাশূন্য। সুত্র- একাত্তর টিভি
Discussion about this post