হার্টবিট ডেস্ক
করোনার পাশাপাশি এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে সবচেয়ে বেশি। তাই ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি এডিস মশা নির্মূলে সিটি কর্পোরেশনসহ দায়িত্বশীলদের দ্রুত কার্যকর ও পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
বাসা-বাড়ির টব থেকে শুরু করে রাস্তায় পড়ে থাকা গাড়ির টায়ারে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, বর্ষা-বাদল বেশি হওয়ায় এ বছর এডিস মশার সংখ্যাও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকারি হিসেবেই এ বছর ডেঙ্গু শনাক্ত রোগী ইতোমধ্যেই প্রায় সাতশ’। কেবল চলতি মাসেই ঢাকার দুই সিটিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন শহরের প্রায় দুইশ’ নাগরিক। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার কারণে ডেঙ্গু পরীক্ষার হার কম। আবার একইসাথে করোনা ও ডেঙ্গু দু’টিতেই আক্রান্ত হচ্ছেন কেউ কেউ। তবে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা করালে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঝুঁকি কমবে বলেও জানান চিকিৎসকরা।
পরিস্থিতি সামলাতে শুক্রবার (৯ জুলাই) থেকে নগরীতে মশানিধন অভিযান শুরু করেছে দুই সিটি কর্পোরেশন। এই অভিযান আরও জোরদারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সতর্কতার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ।
এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে এবং তা করোনা মহামারির কারণে ইতোমধ্যে বিপর্যস্ত হওয়া স্বাস্থ্যখাতকে আরও চাপের মুখে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, একইসঙ্গে ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া অনেক বেশি ঝামেলাপূর্ণ এবং এ কারণে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগী বাড়ার সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যেহেতু করোনা মহামারিও খারাপ দিকে মোড় নিয়েছে, সেক্ষেত্রে বলা যায় সামনে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’
তিনি জানান, গত মাসে করা একটি গবেষণায় ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি এডিস মশার উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাশার বলেন, প্রতি এক বছর বাদে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার একটি ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত বছর স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এক হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গু রোগী ও ডেঙ্গুতে নয় জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন।
‘এই ধারা পর্যালোচনা করে বলা যায়, এ বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং জুনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সেদিকেই নির্দেশ করছে। যদি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কোন উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সংক্রমণের হার আগস্ট পর্যন্ত বাড়তে থাকবে’, বলেন কবিরুল বাশার।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকাল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এইচ এম নাজমুল আহসান বলেন, ‘একইসঙ্গে ডেঙ্গু ও করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে ডাক্তাররা সমস্যায় পড়বেন।’
‘ডেঙ্গু রোগীর শরীরে রক্তপাত হয় এবং করোনা রোগীর দেহে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা দেয়। আমরা রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিহত করার জন্য করোনা রোগীদের একটি ইনজেকশন দেই। কিন্তু, যদি একই রোগীর দেহে ডেঙ্গু থাকে এবং তার প্ল্যাটিলেটের সংখ্যা এক লাখের নিচে থাকে, সেক্ষেত্রে তাকে এই ইনজেকশন দেওয়া যায় না,’ বলেন তিনি।
কীটতত্ত্ববিদ ও বাংলাদেশ প্রাণীবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি মনজুর চৌধুরী বলেন, মানুষকে সচেতন করতে হবে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে। সপ্তাহে অন্তত একবার জমে থাকা পানির পাত্র খালি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এডিস মশা সাধারণত বর্ষাকালে, মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বংশবিস্তার করে থাকে।
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, তারা ঢাকায় একটি প্রাক-বর্ষা সমীক্ষা চালিয়েছিলেন এবং সেটির ফলাফল ইতোমধ্যে দুটি সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে।
তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি বাকি সবাইকে তাদের নিজ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে।
‘আমাদেরকে ফুলের টব, ট্রে, প্লাস্টিকের পাত্র, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, অব্যবহৃত কমোড এবং অন্যান্য উৎস, যেখানে পরিষ্কার পানি জমে থাকতে পারে, তা পরিষ্কার রাখতে হবে যেন এডিস মশার প্রজনন না হয়’, বলেন নাজমুল।
Discussion about this post