হার্টবিট ডেস্ক
চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রোগীর চাপ বেড়েছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে। চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই। একইসঙ্গে হাসপাতালগুলোয় চলছে তীব্র অক্সিজেন সংকট।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেও রোগীর চাপ বেড়েছে অনেক। শনিবার দুপুর পর্যন্ত চমেকের আইসিইউ ইউনিটের ১০টি শয্যার মধ্যে ৯টিই রোগীতে পূর্ণ ছিল। এছাড়াও হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৫৭ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলের করোনা ইউনিটের ১০টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে শনিবার (১০ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত ৯টিতে রোগী ভর্তি আছেন।
চট্টগ্রাম জেনারেল জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও ফোকাল পারসন ডা. মো. আব্দুর রব বলেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ১৮টি। শনিবার (১০ জুলাই) পর্যন্ত সবগুলো শয্যায়ই রোগী ভর্তিআছেন। গত কয়েকদিন ধরেই এ অবস্থা চলছে। প্রতিদিনই আইসিইউ ইউনিটের শয্যাগুলো রোগীতে পূর্ণ থাকে। এছাড়া কেবিনেও চারজন রোগী ভর্তি আছেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের সবারই বেশি পরিমাণে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। আগে প্রতিদিন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দেড় হাজার লিটার অক্সিজেন লাগতো। বর্তমানে সাড়ে তিন হাজার লিটার অক্সিজেন লাগে। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলেই রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। ফলে অনেকেরই অক্সিজেন লাগছে। জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ৪০ শতাংশ রোগীই গ্রামের।
এদিকে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত সরকারি বিআইটিআইডি হাসপাতালেও রোগীর চাপ বেড়েছে। আগে ৩২ শয্যায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হলেও বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৫০ শয্যা করা হয়েছে। শনিবার (১০ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি আছেন ৩৮ জন। তবে হাসপাতালটির চারটি আইসিইউ শয্যা উদ্বোধন করা হলেও জেনারেটরের অভাবে চালু করা যায়নি।
এই বিষয়ে বিআইটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক ও করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৩৮ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্য ২৮ জনকেই অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা দিতে হচ্ছে তিনজনকে। আগের তুলনায় চারগুণ বেশি অক্সিজেন দরকার হচ্ছে হাসপাতালটিতে। অক্সিজেন সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আমাদের চারটি টিম কাজ করছে। কিছুদিন আগেও আমাদের কাছে সংরক্ষণ করা সিলিন্ডারগুলো একবার রিফিল করলেই হয়ে যেত। কিন্তু এখন তা দুই তিন বার রিফিল করতে হচ্ছে।
আইসিইউ ইউনিট চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সবকিছু তৈরি আছে। আইসিইউ চালু করতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন। একটি জেনারেটর আসার কথা। তা আসলেই আইসিইউতে রোগী ভর্তি শুরু হবে। জেনারেটর আজ বা কালকের মধ্যেই চলে আসতে পারে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, জুলাই মাসের প্রথম ১০ দিনে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৭৫ জন। একই সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৬ জন। অথচ গত জুন মাসে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছিল ৫ হাজার ২৫৯ জন। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৭৯ জন। অর্থাৎ জুলাই মাসে এসে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে অনেক।
চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪ হাজার ২৯৯ জন। মোট শনাক্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ৪৯ হাজার ৭১৮ জন। আর জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১৪ হাজার ৫৮১ জন রয়েছেন। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মোট ৭৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪৯০ জন চট্টগ্রাম নগরের। আর বিভিন্ন উপজেলায় মারা গেছেন ২৬৭ জন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী জানান, চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ বেড়েছে। পুরাতন হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে (জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট) যে ১০ টি আইসিইউ শয্যা আছে তা চালু করার চেষ্টা করছি। জরুরি প্রয়োজনে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে কিছু জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ওই ইউনিটটি চালু করা হলে তাদের সেখানে দিয়ে দেওয়া হবে।
Discussion about this post