করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী সাজেক ইউনিয়নে হঠাৎ করে মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরাপাড়া, বড়ইতলীপাড়া, শিবপাড়া, দেবাছড়া, নরেন্দ্র পাড়া, ১নং ওয়ার্ডের মন্দিরছড়া, শিয়ালদহ, তুইচুই ও বেটলিংয়ে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি।
সাজেকের ৭নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরাপাড়ার পুস্প ত্রিপুরা জানান, গত মাসে পরিবারের আরও দুই জনসহ তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। এই ইউনিয়নে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
সাজেক ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হীরা নন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, এর আগে সাজেকে মহামারি আকারে ডায়রিয়া ও হাম (পোলিও) দেখা দিয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় হ্যালিকপ্টারে করে নিয়ে গিয়ে অনেক মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তারা।
সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা জানান, সরকারি ও বেসরকারি হিসাবের চেয়ে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। কারণ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগীরা রক্ত পরীক্ষা করতে আসেন না। জ্বরের লক্ষণ দেখে স্বজনরা বাজারে এসে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে যান। মশারি ব্যবহার না করায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। তবে সাজেক ইউনিয়নের সদস্যদের জরুরি সভা করে জনসচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শসহ নিজে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
রাঙামাটি সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে জেলায় ১৭ হাজার ৪৫ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। এরপর ২০১৮ সালে দুই হাজার ৯৯৩ জন, ২০১৯ সালে ছয় হাজার তিন জন, ২০২০ সালে এক হাজার ৩৭৭ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়। উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বাঘাইছড়িতে। এই উপজেলায় ২০১৪ সালে পাঁচ হাজার ২৫৬ জন, ২০১৮ সালে ৮২৪ জন, ২০১৯ সালে এক হাজার ২৪ জন ও ২০২০ সালে ৩৭২ জন এতে আক্রান্ত হয়।
সূত্র আরও জানায়, রাঙামাটিতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৩২৬ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে জুনেই আক্রান্ত হয়েছেন ২১৭ জন। এর মধ্যে ৭৮ জন বাঘাইছড়ি উপজেলার।
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফেতেকার আহমদ জানান, গত বছরের তুলনায় এই বছরে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। দুর্গম সাজেক ইউনিয়নকে ম্যালেরিয়ার ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্গম এলাকা হওয়ায় ওইসব এলাকায় ব্র্যাকসহ আমরা একসঙ্গে কাজ করি। ব্র্যাক জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে মশারি বিতরণ করা হলেও স্থানীয়রা সেগুলো ব্যবহার না করায় ম্যালেরিয়া বাড়ছে। গত বছর আমরা প্রায় ৮০ হাজার মশারি বিতরণ করেছি। যারা জুমে কাজ করে এবং মশারি ব্যবহার করছে না, তাদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, জেলার চারটি উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগী বেড়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় বেশি না। সকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেসব এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগী বাড়ছে সেসব এলাকায় বাড়তি নজর রাখতে হবে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাঙামাটিতে ২৫ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো এক হাজার ৭৯৮ জনে। তাদের মধ্যে আইসোলেশনে আছেন ১২ জন। আর এখন পর্যন্ত করোনায় মোট ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। source: bangla tribune
Discussion about this post