হার্টবিট ডেস্ক
মাস্ক নিয়ে ঘর থেকে বেরুননি, কিন্তু এখনি মাস্ক প্বারয়োজন কিংবা আপনার এখনিই হাত স্যানিটাইজ করতে হবে, আবার টাকা থাকলেও হাতের কাছে পাচ্ছেন না মাস্ক বা স্যানিটাইজারের দোকান। সমস্যা নেই, মোড়ের করোনা বুথের কাছে যান, বাটন টিপুন ব্যাস আপনার জন্য বুথ থেকে বেরিয়ে আসবে বিনামূল্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার। পুরাতন মাষ্কটিও ফেলতে পারবেন বুথের বিনে। এই চিত্রটি শুধু চট্টগ্রাম শহরেই নয়, এটি এখন বাংলাদেশের আনাচে কানাচের চিত্র।
এটিএম বুথের আদলে চট্টগ্রামের যুবলীগ নেতা বাবরের তৈরি করোনা বুথ সাড়া ফেলেছে সারা দেশে। নগরবাসীর জন্য মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহজলভ্য করার লক্ষ্যে শহরের ২০০টি পয়েন্টে নিজ উদ্যেগে আলহাজ্ মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নিজের আবিষ্কৃত এই করোনা বুথ স্থাপনের কাজ শুরু করেন যুবলীগের সাবেক উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর।
এখন চট্টগ্রামের সেই বাবরের উদ্ভাবিত বুথটি শোভা পাচ্ছে দেশের সর্বত্র। আর সেই বুথটি সবাইকে দেওয়া হচ্ছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উপহার হিসেবে। বুথটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শিবু প্রসাদ চৌধুরী জানিয়েছেন, করোনা প্রতিরোধে কার্যকর এই বুথটি তৈরি করতে খরচ হয় ১২-১৪ হাজার টাকা। আর যারাই আমাদের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করে তাদের আমরা বিনামূল্যে বুথটি বানিয়ে দিই এবং প্রথমবার মাষ্ক ও স্যানিটাইজার পরিপূর্ণ করে দেই। তবে এখানে শর্ত হিসেবে থাকে পরের বার থেকে তাদেরই মাষ্ক ও স্যানিটাইজার পরিপূর্ণ করতে হবে।
নিজের উদ্ভাবিত বুথটির জন্য তিনি কোন প্যার্টানও নেননি, নেন না কোন টাকাও। শুধুমাত্র দেশবাসীর সেবার্থে এই উদ্যোগ।
বাবরের এই উদ্যোগকে বাহবা জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দল। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘মাষ্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার করোনা প্রতিরোধের প্রধান অস্ত্র। আমি করোনার শুরু থেকে এই পর্যন্ত কয়েক সহস্র করোনা রোগীকে সেবা দিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি মানুষ যদি ঠিকভাবে মাষ্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ করে তবে করোনা মোবাবেলা করা বেশ দুষ্কর না।’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক বাবরের বুথটি বসিয়েছেন নিজ এলাকায়। বুথটি উদ্বোধন করে প্রতিমন্ত্রী তার ফেসবুকে লিখেছেন, এটিএম বুথের আদলে তৈরি এই বুথটি ব্যবহার করে জনসাধারন দ্বিতীয় ব্যক্তির সহযোগিতা ছাড়া ‘সেল্ফ হেল্প’ এর মাধ্যমে মাষ্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারবে। সবার জন্য উন্মুক্ত এই বুথ থেকে বিনামূল্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার পাবে সকলে।
শুধু পলকই নন, মহিউদ্দীন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১০টি বুথ উপহার নিয়েছেন নড়াইলের সাংসদ ও সাবেক জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মতূর্জা। তিনি তার সংসদীয় আসনের দশটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়েছেন এই বুথ।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহীর সিটি মেয়র এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান লিটনসহ আরো অনেকে তাদের নিজ এলাকায় বসিয়েছেন চট্টগ্রামের এই উপহার।
লোহাগাড়া, বোয়ালখালী, চকরিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া সহ বাবরের এই করোনা বুথ জায়গা করে নিয়েছে নগরের ৪০টি ওর্য়াডে। এছাড়াও রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী ও হাটহাজারীর মেয়র চেয়ারম্যানরা নিজেদের এলাকায় বসিয়েছেন করোনার এই এটিএম বুথ। চাঁপাইনবাবগন্জ ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও বসেছে একাধিক বুথ।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারন সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু ঘোষণা দেন তাদের পক্ষ থেকে বসানো হবে একাধিক করোনা বুথ।
চট্টগ্রামের ছেলের এমন কাজে গর্বিত চট্টগ্রাম নগর নগরপিতা রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, করোনা মহামারি মোকাবেলায় মানুষের কাছে মাষ্ক ও স্যানিটাইজার সহজলভ্য করার জন্য এই বুথটির জুড়ি মেলা ভার। করোনাকালে বাবর যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য ।
Discussion about this post