হার্টবিট ডেস্ক
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে সীমান্তর্বতী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়। সরকার লকডাউন জারী করে ।তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের গড়ে তোলা সামাজিক আন্দোলনে সংক্রমণের হার নেমে আসে ১০ শতাংশে। তাই ‘চাঁপাই মডেল’টি দেশের অন্য স্থানেও প্রয়োগের আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সালের যৌথ উদ্যোগে রোববার (৪ জুলাই) আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সভায় বক্তারা এমন সুপারিশ করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল তার নির্বাচনী এলাকা শিবগঞ্জে করোনা প্রতিরোধে সম্মিলিত কার্যক্রম পরিচালনা করে সফলতা প্রদর্শন করেছেন। এ আসাধারণ সাফল্যের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতেই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ডা. সমিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও যুক্ত ছিলেন মো. আয়েন উদ্দিন এমপি, মনরঞ্জন শীল গোপাল এমপি, ফেরদৌসি ইসলাম এমপি, ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, প্রফেসর নজরুল ইসলাম, আব্দুল কুদ্দুস এমপি, ফেরদৌসী ইসলাম এমপি, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, আহমেদ মোশতাক রেজা চৌধুরী, রুহিন হোসাইন প্রিন্স, ড. তোফায়েল আহমেদ, ডা. তৌফিক জোয়ারদার, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের কনসালট্যান্ট ড. জিয়াদুল করিম, সুভাষ সিংহ রায় প্রমুখ। আলোচনাটি পরিচালনা করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি।
ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, চারটি ধাপে এই কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। কমিউনিটি মোবিলাইজেশন, রিস্ক কমিউনিকেশন, স্ক্রিনিং ও রোগী ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক প্রভাব মিটিগেশন।
শুরুতে প্রশাসন, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, বেসরকারি সংস্থা এবং নারী-পুরুষ-তরুণসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে সংগঠিত করে জেলা, উপজেলা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। এরপর একটি কার্যপরিকল্পনা প্রস্তুত করে কাজ শুরু করি। পরবর্তী ধাপে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে জনগণকে ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা হয়।
লিফলেট, মাইকিং, মাস্ক বিতরণ ও হাত ধোয়া কার্যক্রম প্রদর্শনের মাধ্যমে এসব সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তৃতীয় ধাপে করোনা পজিটিভ রোগীদের আইসোলেশন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হয়।
এছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিবগঞ্জ হাসপাতালে একটি করোনা ইউনিট খোলা হয়েছে, যার শয্যা সংখ্যাও বাড়নো হয়েছে। পাশাপাশি জনগণকে ভ্যাকসিন গ্রহণে উৎসাহিত করতে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
শিবগঞ্জে মে মাসের শেষের দিকে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ৬২ শতাংশ। আমাদের এই কার্যক্রম পরিচালনার পর দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রামণের হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি নেমে আসে। যদিও এখন একটু বেড়েছে, তবে সেটি খুব বেশি না। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের হারও এখানে অনেক কম। একটি জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, শিবগঞ্জে মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার হার প্রায় ৬৬ শতাংশ, পার্শ্ববর্তী এলাকাতে যা মাত্র ৩০ শতাংশের মতো।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একজন সংসদ সদস্য সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। সবাইকে নিয়ে কাজ করেছেন। একাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু ঘরে ঘরে প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছিলেন, সেজন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করতে পেরেছিলাম।
সংসদ সদস্য এবং তার সহযোগীরাও একটা গণআন্দোলন তৈরি করতে পেরেছেন। একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছেন। সামাজিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের একটা সুনাম আছে। এই ঐতিহ্যকে তারা কাজে লাগিয়েছেন, বিরাট সফলতা অর্জন করেছেন।
শহীদুজ্জামান এমপি বলেন, আমাদের রাজনীতিবিদদের আরও দৃঢ়চিত্ত হয়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতে হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটি একটি আদর্শ মডেল হতে পারে। আমাদের মতো অপ্রতুল সম্পদ ও জনবহুল দেশে কমিউনিটিকে নিয়ে কাজ করার কনো বিকল্প নেই। যতই ভ্যাকসিন আসুক শর্টেজ থাকবেই, যতই হাসপাতালে বেড বাড়ান শর্টেজ থাকবেই- এজন্য সামাজিক জিনিসগুলো অনেক বেশি কার্যকরী।
Discussion about this post