হার্টবিট ডেস্ক
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কাজের স্বীকৃতি পাননি বলে অভিযোগ বাংলাদেশের ফিজিওথেরাপিস্টদের। তাদের দাবি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে রচিত হয়েছিল এই পেশার ভিত। অথচ, স্বাস্থ্য বিভাগের অবহেলা আর পরিচয় সংকটের কারণে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
এ অবস্থায় সম্মিলিত ব্যাচেলর (বিপিটি) ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপিস্টদের সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদায় নিয়োগসহ নানা দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে ফিজিওথেরাপিস্টদের পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ ফিজিও থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি ইশরাত জাহান জানান, দেশে ফিজিওথেরাপিস্টরা খুবই সংকটাপন্ন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। এ ফিজিওথেরাপি পেশাটি বঙ্গবন্ধুর হাতে জন্ম হয়েছে, আর এখন বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতেই এর ভাগ্য নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, প্রায় প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালসহ অলিগলিতে ফিজিওথেরাপি সেন্টার চোখে পড়ে; কিন্তু সাধারণ মানুষ কি জানে এর কয়টিতে পাশ করা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রয়েছেন? একদল অসাধু ব্যবসায়ী ফিজিওথেরাপির নাম ভাঙিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। রোগীরা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পাচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার কেউ নেই।
অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, যেখানে বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসাবিজ্ঞান দিন দিন উন্নত হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে যখন এর ব্যাপ্তি বাড়ছে, তখন আমাদের দেশে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখাকে বিলুপ্ত করার অপচেষ্টা চলছে।
পেশা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি ফিজিওথেরাপিস্টদের
আপা,
আসসালামু আলাইকুম। বিশ্বে এই মহামারির মধ্যেই আপনার যোগ্য নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে চলছি। আজ অনেক আশা নিয়ে আপনাকে লেখার সাহস করছি। আমি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট। আমি আমার পরিচয়ে গর্বিত হতে পারতাম কারণ আমি মানুষের সেবা করি। কিন্তু আপা, বিশ্বাস করেন আমি আমার পরিচয়ে গর্বিত হতে পারি না। কারণ রাষ্ট্র আমাকে এই ৫০ বছর পরেও যোগ্য স্বীকৃতি দেয়নি। আমরা (বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন) সম্ভাব্য সব চেষ্টা করেছি, স্বাস্থ্যখাতের স্ট্যান্ডার্ড সেটাআপে যুক্ত হতে প্রয়োজনীয় সব দাফতরিক কাজ করেছি। কিন্তু জানি না কোন কারণে আমাদের যুক্ত করা হচ্ছে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
বঙ্গবন্ধুর প্রতিটা স্বপ্নপূরণের চেষ্টা আপনি করছেন। আপনি সবক্ষেত্রেই সফল শুধু এই ফিজিওথেরাপি প্রফেশন এখনও আপনার সুদৃষ্টি পায়নি। ইতিহাস আপনি আমার চেয়ে অনেক বেশি জানেন। জাতির পিতা একটি সক্ষম জাতি গঠনের স্বপ্ন নিয়ে ফিজিওথেরাপি গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে চেয়েছেন। হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট যেখানে জাতিকে সেবা দিতে পারত আজ তাদের কোনো নিয়োগ নাই! নাই কোনো ক্যারিয়ার পরিকল্পনা।
আমার একটি বিনীত জানতে চাওয়া- একমাত্র আমাদের ক্ষেত্রেই কি জাতির পিতার স্বপ্ন ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে না? ব্যাচেলর ডিগ্রি করা ফিজিওথেরাপিস্টরা (প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদায়) যদি নিয়োগ না পায়, তবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা কি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে না?
আপা,
আমি প্রায় ৪৫ বছর বয়সী। আমার ব্যক্তিগত (পেশার ক্ষেত্রে) চাওয়া-পাওয়া আর নাই। চাইতে চাইতে ক্লান্ত। কিন্তু সন্তানতুল্য প্রজন্মকে কী বলব? আপা খুব কষ্ট হয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশোনা শেষ করেও স্বামী-সন্তানসহ দেশে চলে এসেছি শুধু দেশের কথা ভেবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা (মুজিব বাহিনী) বাবার রক্ত আমার শিরায় উপশিরায়, নিজের আগে দেশের কথাই ভাবতে শিখিয়েছে।
আপা,
আমরা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে আছি। আমরা কে? ট্যাক্স পে করার সময়ে, পাসপোর্ট করতে, বিসিএস এটেন করতে আমরা আসলেই জানি না আমরা কে?
আপা,
আমরা সব জায়গায় চেষ্টা করেছি, ডিজি হেলথ, মন্ত্রণালয় কিছু বাদ নাই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদের বিষয়ে অবগত। আপনি আমাদের শেষ ভরসা। আমরা জনমানুষের সেবা করতে চাই কেননা যে প্রাইভেট প্রাকটিস করি তাতে এই সেবা নেওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।
আপা,
এই ক্রান্তিকালে সবাই যখন ইকোনমিক কষ্টে আছে তখনো আমরা দাঁতে কামড় দিয়ে আছি। কোথাও গিয়ে সাহায্যের আবেদন করিনি। আমরা নিজেরা নিজেদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমরা শুধু এই আত্মসম্মানবোধটুকু সম্বল করে বেঁচে আছি। চাইনি সরকারের ওপর সামান্য পরিমাণ বোঝা বাড়ুক।
আপা,
অনেক চাওয়ার মাঝে দুটি চাওয়া এখন সময়ের দাবি- ১. মহাখালীতে কলেজের বরাদ্দ করা জায়গায় দ্রুত কলেজ বাস্তবায়ন। ২. বিপিটি করা ফিজিওথেরাপিস্টদের প্রথম শ্রেণির নিয়োগ।
আপা,
সঠিক ফিজিওথেরাপি পেতে হলে যোগ্য লোকদের এর বাইরে রেখে কি তা সম্ভব? ফিজিওথেরাপির প্রয়োজনীয়তা কী এখনতো তা সবাই জানে।
আপা,
সরকারি প্রয়োজনেও যখন পেশেন্টকে সি আর পিতে রেফার করতে দেখি তখন লজ্জা পাই। সরকারি একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান আপনি চাইলেই হয়। আমরাতো জানি বঙ্গবন্ধু কন্যা সঠিক কাজ করতে কখনো পিছপা হন না।
আপা,
সাহস করে আপনার গোচরে আনার জন্য দুটো কথা বলে ফেলেছি। ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন। আরেকটা কথা আপা, বাঙালি মহিলা হিসেবে আপনি আমার আইডল। আপনার শাড়িগুলো যে আমার কি ভালো লাগে। যখন টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি পরেন বা জামদানি বা কাতান, এমনকি সুতি সবগুলোই অসাধারণ। আমার চিঠিখানা আপনার কাছে পৌঁছাবে এই আশা নিয়ে লিখলাম। আপনার সুস্থতা, দীর্ঘায়ু ও সুদৃষ্টি কামনা করি।
ধনবাদান্তে,
ইশরাত জাহান
সিনিয়র সহসভাপতি
বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন।
১৯৫৭ সালে রাজধানীর তোপখানা রোডের ফিরোজা বারী শিশু পঙ্গু হসপিটালে প্রথম ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু হয়। পরে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য একটি ওয়ার্ডে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা চালু করা হয়। বঙ্গবন্ধুর সহায়তায় ডা. আর জে গাস্ট আরআইএইচডি নামে একটি প্রকল্প চালু করেন, যেটা বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত।
Discussion about this post